মো: ইউছুপ মজুমদার, আমাদের রামু ডটকম।
টানা তিন দিনের বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে বন্যার পানিতে ডুবে থাকা বান্দরবানের লামা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে। তবে বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নিচু এলাকা গুলোতে ঘরবাড়ি এখনও পানিতে ডুবে আছে। ঘুর্ণিঝড় মোরা‘র ও আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া লামা উপজেলার ক্ষত না শুকাতে পর পর দুটি বন্যায় খুবই কষ্টে পড়েছে লামা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।
রোববার থেকে তিন দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে বান্দরবানের লামায় অর্ধশত বাড়ি-ঘর মাটির নীচে চাপা পড়ে বিধস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে লামা পৌর এলাকাসহ লামা ৭টি ইউনিয়ন। এতে পানি বন্ধি হয়ে পড়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেয় পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসায়। পাহাড় ধস ও বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় লামা-চকরিয়া ও আলীকদম-চকরিয়া সড়কের যান চলাচল বন্ধ থাকে দুদিন।
প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, লামা বাজার, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, লাইনঝিরি, ফকিরপাড়া, হাজ্বীপাড়া, কলিঙ্গাবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি, বনপুর ও লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, অংহ্লাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া লামা উপজেলা সদরের সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বর্তমানে পানির নীচে ডুবে আছে। চেয়ারম্যানপাড়া, নয়াপাড়, রূপসীপাড়া, লাইনঝিরি, ফাঁসিয়াখালী ও ফাইতংয়ে পাহাড় ধসে প্রায় অর্ধশত মাটি চাপা পড়ে।
আগ থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ায় রক্ষা পায় এসব এলাকার বাসিন্দারা। লামা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, রমজানের আগে মোরা‘র তান্ডবে পথে বসার উপক্রম হয়েছে লামা ব্যবসায়ীদের। উপজেলার বিদ্যুত ব্যবস্থা ও যোগযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পুরো রমজানে আর কোনো বিকিকিনি হয়নি। বিকিকিনি হবেই বা কিভাবে! সাধারণ মানুষ বিধস্ত বাড়ি ঘর মেরামত করবে না ঈদের কেনা কাটা করবে। সেই ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেওয়ার আগেই আবার বন্যা ও পাহাড় ধস। ঘর বাড়ি বিধস্ত। জাপান বড়ুয়া বলেন, বন্যার পানিতে মালামাল ভিজে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছে। ফিরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হয়ে যাবে। অনেক ব্যবসায়ীর দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুজি হারিয়ে পথে বসেছেন বলেও তিনি জানান।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু আমাদের রামু ডটকমকে জানান, বন্যার পাশাপাশি পাহাড় ধসের অনেক খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে সাধ্যমত শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, কিস্কুট ও খাবার পানি সরবরাহ করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
খিন ওয়ান নু বলেন, কি পরিবামন ক্ষতি হয়েছে এখনও নিরুপন করা হয়নি। তবে বন্যা ও ঢলে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।