এখন অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিত্যপণ্য কেনাবেচা চলছে। বাদ যায়নি পর্যটনও। বিশ্বের যেকোনও প্রান্ত থেকে বুকিং করা যাচ্ছে হোটেল, রিসোর্টের রুম, উড়োজাহাজের টিকিট, ট্যুর প্যাকেজ। ক্রেতাদের আর্কষণ করতে চলছে বিভিন্ন রকম প্রচারণা। ধীরে হলেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের পর্যটন খাতে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেটে দেশের পর্যটন নিয়ে আরও প্রচারণা হলে বাড়বে এ খাতের আয়।
ব্যবাসায়ীরা বলছেন, ‘প্রতিনিয়ত বাড়ছে অনলাইনে বুকিং। বাংলাদেশের পর্যটনে সম্ভাবনা থাকলেও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণার অভাবে অর্জিত হচ্ছে না লক্ষ্যমাত্রা। তারা বলছেন, কোটি টাকা খরচ করে বিদেশের মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব না হলেও সহজে অনলাইনে প্রচারণা সম্ভব। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতির তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভুঁইয়া কাঞ্চন বলেন, ‘দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেটে সক্রিয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনলাইনে পর্যটন সেবা প্রতিষ্ঠানে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পিছিয়ে আছে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় অনলাইনে দেশের পর্যটন-বিষয়ক তথ্য প্রচারেও পিছিয়ে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে ট্যুরিজম বোর্ড বিভিন্ন সময়ে অনলাইন ক্যাম্পেইনের কথা বললেও সফল উদ্যোগ নিতে পারেনি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ বিষয়ে নজর দিলে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েব বাংলাদেশের পর্যটন।’
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সংস্থা ট্রিপ অ্যাডভাইজার, মেকমাইট্রিপ ডট কমের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান। দেশেও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণে সহায়তা করতে চালু হয়েছে বিভিন্ন অনালাইন প্ল্যাটফর্ম। এছাড়া, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সও চালু করছে হলিডেজ উইং। অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও চলতি বছরের মার্চে হলিডেজ উইং চালু করেছে। অনলাইনে প্রচরণা করা হচ্ছে হলিডেজ উইংয়ের মাধ্যমে। অনলাইনে বাড়ছে বিমানের টিকিট বিক্রি।
ট্যুর প্যাকেজ ও হোটেল বুকিংয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মধ্যে অন্যতম জোভাগো। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদ উপলক্ষে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অনলাইনে হোটেল সার্চ করেছেন। এরমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটের হোটেল সার্চ করা হয়েছে বেশি। অনলাইনে হোটেল বুকিং এবার শতভাগ পর্যন্ত বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জোভাগো বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মেহরাজ মুয়ীদ বলেন, ‘সহজ ভ্রমণসুবিধা নিশ্চিত করতে অনলাইন বুকিং ও মানানসই থাকার সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে জোভাগো। জোভাগো থেকে বাংলাদেশের ১ হাজারের বেশি হোটেল, রিসোর্ট বুক করা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়ার বেশ কিছু দেশের মানুষের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি। ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে জোভাগো শুরু করেছি। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটে সেবা নেওয়ার হার ১০ গুণ বেড়েছে।’
ঘুরব ডটকমের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মুহাম্মদ তাহের জামিল বলেন, ‘সম্পূর্ণ দেশীয় বিনিয়োগে দীর্ঘ গবেষণার ফসল ঘুরব ডটকম।হোটেলের থেকে শুরু করে, গাড়ি কিংবা প্লেনের টিকেট বুকিং দেওয়া সুবিধা আমরা দিচ্ছি।অনালাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ভ্রমণপিপাসু ও পযর্টকদের হোটেল বুকিং সেবাকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করছে। একইসঙ্গে ভ্রমণের খরচ জেনে নিতে পারছে, চাইলে বুকিং দিতে পারছে হোটেলের রুমও।’
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে বিমান হলিডেজ চালু করা হয়েছে।’ অনলাইনে বিমানের টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে শাকিল মেরাজ বলেন, ‘মানুষ এখন অনেক বেশি অনলাইনমুখী হচ্ছে।দেশি-বিদেশি মানুষ অনলাইনে বিমানের টিকিট ক্রয় করছে, বাংলাদেশে ভ্রমণে আসছে। ২০১৬ সালে অনলাইনে প্রায় ৮৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। আগামী বছর আমরা আশা করছি বিগত বছরের দ্বিগুণ হবে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশে জাতিসংঘের পর্যটনবিষয়ক সংস্থা ইউএনডব্লিউটিওর কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (সিএপি) এবং দ্য কমিশন ফর সাউথ এশিয়ার (সিএসএ) ২৯তম যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতিসংঘের পর্যটনবিষয়ক সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল তালেব রেফাই উল্লেখ করেন, ‘নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও টেকসই পর্যটন—এই তিনটি বাংলাদেশে পর্যটনের বিকাশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা: ড. মো. নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাইভেট-পাবলিক পাটনারশিপের মাধ্যমেই ট্যুরিজম এগিয়ে যাবে। সরকার এককভাবে কিছু করতে পারবে না। যারা নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন, ভালো উদ্যোগ নিচ্ছেন, আমরা তাদের সহায়তা করছি। আমরা ডিজিটাল প্রমোশনের উদ্যোগ নিচ্ছি। চলতি অর্থ বছরেই কাজ শুরু করব।’
ড. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ট্যুরিজম নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। নতুন-নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আমরাও ভাবছি।’
রিপোর্ট বাংলা ট্রিবিউনের।