ক্রীড়া প্রতিবেদন:
প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে অমন সমালোচনা কখনও শুনেননি মুশফিকুর রহিম। নিজের ক্রিকেট নিয়ে সমালোচনা মেনে নিতে রাজি আছেন; কিন্তু তার নিবেদন, শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা মানতেই পারছেন না কিছুতেই। তার বিরুদ্ধে বরিশাল বুলস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের অভিযোগে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন মুশফিক।
ক্রিকেটারদের অনুশীলন শেষ, তাদের ছবি নেওয়ার জন্য গেটের বাইরে অপেক্ষায় সংবাদকর্মীরা। কিন্তু কারওরই দেখা নেই। জানা গেল বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বসেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিক, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা। মুশফিকের ব্যাপারে বরিশাল বুলস ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের বক্তব্য নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন তারা।
লম্বা আলোচনার পর গণমাধ্যাম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে এলেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব মল্লিক। সঙ্গে ছিলেন মুশফিক ও নিজাম উদ্দিন। টেস্ট অধিনায়কের পাণ্ডুর মুখ আর ছলছল চোখই বলে দিচ্ছিল অনেক কিছু।
শুরুতে পরিস্থিতি সম্পর্কে খানিকটা বললেন মল্লিক। গণমাধ্যমকর্মীরা শুনতে চাইছিল টেস্ট অধিনায়কের বক্তব্য। এমনিতে গুছিয়ে, সব বিষয় স্পর্শ করে কথা বলা মুশফিক এদিন খেই হারালেন বারবার, শেষের দিকে ধরে এলো কণ্ঠ।
“আমি ১৭ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি। জাতীয় দলের হয়ে ১২ বছর খেলছি। এখন পর্যন্ত আমার সম্পর্কে কেউই এমন বলেনি। যে কেউই বলতে পারে, আমি খেলোয়াড় ভালো নই। কিন্তু ডিসিপ্লিন্ড নই কিংবা দায়িত্ববোধ নেই, আমি খেলোয়াড়দের মোটিভেট করতে পারি না, টিম মিটিংয়ে কথা বলি না (এগুলো কেউ বলতে পারবে না)।”
“এগুলো একজন ক্রিকেটার হিসেবে শোনা আমার জন্য খুবই কষ্টকর। … আজকে হয়তো এটা আমার সঙ্গে হয়েছে কালকে তো অন্য কারো সঙ্গে হতে পারে।… দেশকে আপনি এতো বছর ধরে সার্ভিস দিচ্ছেন ..এতোটুকু আপনি চাইতেই পারেন।”
এতটুকু বলেই প্রেস কনফারেন্স থেকে বেরিয়ে যান মুশফিক। তার চোখের জল নজর এড়ালো না কারোরই। বিপিএলের এই আইকন খেলোয়াড় যেখানে শেষ করেন সেখান থেকেই শুরু করেন মল্লিক।
“আমাদের একজন অধিনায়কের বা জাতীয় দলের খেলোয়াড় সম্পর্কে প্রকাশ্যে এইভাবে কথা বলার অধিকার আমরা কাউকে দেইনি। বিপিএলের একটা আচরণবিধি আছে ফ্র্যাঞ্চাইজির অবশ্যই তা মানতে হবে।”
“খেলোয়াড়দের সম্পর্কে তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বরাবর অভিযোগ জানাতে হবে। খেলোয়াড়রা কোনো ভুল করলে তাদের শাসন করা কিংবা শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি থাকলে সেটা বোর্ড করবে। কোনো ফ্র্যাইঞ্চাইজির তো এটা করার কোনো এখতিয়ার নেই।”
বেসরকারী একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম মালিক ও বিসিবি পরিচালক এমএ আওয়াল চৌধুরী মুশফিকের নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। বিপিএলের সদস্য সচিবের কাছে তার এই বক্তব্য অশোভন মনে হয়েছে।
“আমি এবং আমাদের সিইও পুরো ভিডিওটা দেখেছি। দেখার পর বিষয়টি আমাদের কাছেও শোভন মনে হয়নি। আমি এটা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলরের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও আলাপ করেছি। বোর্ড সভাপতি দেশে নেই। থাকলে ওনার সঙ্গেও আলাপ করতাম। এখানে যা বলা হয়েছে এটা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
এখন দেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ও সফল ক্রিকেটার মুশফিকের সমালোচনা করছে বরিশাল। অথচ গতবার তারাই আগ্রহভরে দলে নিয়েছিল পরীক্ষিত এই তারকা খেলোয়াড়কে।
“মুশফিক কিন্তু বরিশালে যেতে চায়নি। বরিশালই মুশফিককে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পরবর্তীতে আমরা মুশফিকের সঙ্গে কথা বলে তাকে সেখানে দেই।… যে সব কথা আসছে সেগুলো মেনে নেওয়া কঠিন।”
“তাকে ডাকা হয়েছে। তাকে আমরা শোকজ করব। ঠিকঠাক উত্তর না পেলে আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটা আর্থিক হতে পারে কিংবা ভিন্ন কোনো শাস্তিও হতে পারে।”
মল্লিক জানান, মুশফিকের আর কিছু করতে হবে না। অধিনায়কের দায়িত্ব ছিল যথোপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে জানানোর। সেটা তিনি করেছেন। এবার বাকিটুকু করার পালা গভর্নিং কাউন্সিলের। সে দিকেই তাকিয়ে আছেন ক্রিকেটাররা।
রিপোর্ট বিডিনিউজের।