আলাউদ্দিন, লোহাগাড়া, আমাদের রামু ডটকম:
পাঠক গত পর্বে তুলে ধরলাম হাসপাতালের বারান্দায় বেওয়ারিশ পঙ্গু রোগীদের কষ্টের জীবনকথা । এবার তুলে ধরব ভিতরে থাকা ২৬নং ওয়ার্ড তথা অর্থোপেডিক বিভাগে থাকা রোগীদের কথা ।
আগে বলে রাখি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে আমি প্রথম । কাউন্টার থেকে ভর্তির টিকেট নিয়ে নিলাম । পাশে তখন ছোট্ট একটা সাউন্ডবক্স থেকে আওয়াজ শুনতে পাই । সেখানে বলতেছে হাসপাতালে ভর্তি ফি ছাড়া কাউকে কোন টাকা দিবেন না । ভাবলাম তারা সুন্দর সিস্টেম চালু করেছে । ততক্ষণে মধ্য বয়সী এক নারী (আয়া) মাকে উপরে নিতে একটা ট্রলি নিয়ে আসল ।
ভাবলাম মেডিক্যাল এত উন্নত সেবা ভর্তির সাথে সাথে মাকে উপরে তোলার জন্য ট্রলি হাজির । সেখান থেকে চললাম লিপটে। লিপটম্যান আমাদের দেখে কয়েকজনকে নামিয়ে দিয়ে আমাদের উঠতে বলে, আমরা উঠলাম লিপটে । আয়া বলল ২৬ নং ওয়ার্ডে যাবে। মাঝপথে লিপট থামল, বলল এসে গেছেন । তখন খুশী হয়ে ধন্যবাদ দিলাম । পিছন থেকে ডাক মারল লিপটম্যান ভাই, বকশিস কই ? । আয়া বলল একশ লিপটম্যানকে একশত টাকা দেন । আমি বললাম কিসের জন্য ১শ টাকা । সে বলল বকশিস । তখন আমি হতবাক হয় গেলাম ।
মানিব্যাগ থেকে ৫০টাকা দিতে চাইলাম কিন্তু সে নিচ্ছেনা । পরে অনেক বলাবলির পর কোনমতে ৫০ টাকা নিতে বাধ্য হল । এবার আয়ার পালা তাকে তো কিছু দিতে হবে মাকে বেডে রাখলাম । পকেট থেকে ৫০ টাকা নিয়ে হাতের মধ্যে ধরিয়ে দিলাম । না সেও
নাছোড়বান্দা ১শ টাকার কম নিবে না । অনেক কথা কাটাকাটির পর ১শত টাকা দিতে হল তাকে ।
অবশেষে ঠাঁই হল ২৬ নং মহিলা ওয়ার্ডে । চারদিকে রোগী আর রোগী । কারো পা আবার কারো হাত । কথা হল কয়েকজন রোগীর সাথে ।এই ওয়ার্ডের বেশীরভাগ রোগী নাকি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার । কথা হচ্ছে মায়ের সিটের পাশে থাকা এক উপজাতি মহিলা রোগীর সাথে । বয়স ২৬ বছর এর কাছাকাছি । এক পা পুরো ব্যান্ডেজে ঢাকা ।
পাশে তার মা স্বামী ও একটা বাচ্চা। বাড়ি মাটিরাঙ্গায় । জানতে চাইলাম এই অবস্থা কি করে হল । জবাবে বলল বোনের শশুর বাড়িতে দাওয়াত ছিল । সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পর রাস্তা পার হওয়ার সময় চলন্ত ট্রাক নাকি তার এক পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় ।মারাত্মকভাবে তার পায়ের পাতা থেতঁলে যায় । সেই থেকে গত দেড়মাস যাবৎ ভর্তি আছে। বাড়ি দুরে হওয়ায় আসা যাওয়া খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের । চিকিত্সা বাবদ চলে গেছে অনেক টাকা ।
এবার পুরুষ ওয়ার্ডে কিছুক্ষণ সেখানে কথা হল একজনের সাথে । নাম আবদুর রহিম । পেশা ইলেকট্টিশিয়ানের কাজ করে । বয়স প্রায় ২৮ এর কাছাকাছি । বাড়ি রাউজানে। সংসারের দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে বড় । বাবা চায়ের দোকান করে এলাকায় । বেশিরভাগ তার উপার্জনের টাকায় চলত সংসার । ভ্যাগের কি নির্মম পরিহাস মোটর সাইকেল সড়ক দুর্ঘটনায় তার একটি পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায় । শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত এবং গুরুত্বর জখম হয় । চিকিত্সা ও থাকা খাওয়া টুকিটাকি বিষয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে । হাসপাতালে প্রায় ১ মাসের কাছাকাছি ভর্তি আছেন । বড় ছেলে আহত হওয়ায় এখন তাদের সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকার । ওই ওয়ার্ডে রোগীদের বেশিদিন থাকতে হয় কারণ হাঁড় ভাঙ্গা রোগীরা সহজে সুস্থ হয়না ।
তাদের পুরোপুরি সুস্থ্য হতে অনেক সময় লাগে । মুলত এই ওয়ার্ডে আপনি দেখতে পারবেন প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।পুরুষ রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের অনেকের ঠাঁই হয় সিটের নিচে অথবা গলিতে । হাসপাতালে আপনি যদি ওই ওয়ার্ডে থাকেন তাহলে অপনিও অর্ধেক রোগী হয়ে যাবেন এসব চিত্র গুলো দেখে ।
লেখক : অনলাইন সংবাদকর্মী।