জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী শতভাগ বেতনভাতা পাচ্ছেন না চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশও অকার্যকর। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা। তারা নিয়মিত শ্রম দিয়েও উপযুক্ত প্রাপ্য পাচ্ছেন না।
কর্মচারীরা বলেন, আজও শতভাগ বেতনভাতা বাড়েনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব অনটনে মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা।
ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ হারে বর্ধিত বেতনভাতা ভোগ করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। কিন্তু এ সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। জাতীয় স্কেল অনুযায়ী মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীরা বর্ধিত হারে শতভাগ বেতনভাতা ভোগ করছেন। কিন্তু বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরা তা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে দিশেহারা রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও বিভাগে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী অনেকে জানান, কর্মক্ষেত্রে সবার হুকুমের গোলাম হয়ে সার্বক্ষণিক সবচেয়ে অধিক শ্রম দিতে হয়। প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সব সময় ঊর্ধ্বগতিতে। অনেকে থাকেন ভাড়া বাসায়। এতে ব্যয় হয় বেতনের সিংহভাগ। এছাড়া ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখাসহ সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় নানান ব্যয় মেটাতে প্রতি মাসেই পড়তে হয় কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। মাস শেষে বেতন তুললেও মুদি দোকানসহ বিভিন্ন দোকানে করা বাকি টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে অবশিষ্ট আর থাকে না। এভাবে মাসের পর মাস কষ্টে পার করে দিতে হয়। উপযুক্ত প্রাপ্য বেতনভাতা পেলে কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হয়ে যেত।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতনস্কেল ঘোষণার আগে সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অধিশাখা-৪ ২০১৪ সালের ৪ মে ২০১১-৪৩ স্মারকে যুগ্ম সচিব (বাস্তবায়ন) মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা স্বাক্ষরিত মন্ত্রণালয়/বিভাগে কর্মরত এমএলএসএস, দফতরি বা সমস্কেলভুক্ত অন্যান্য চতুর্থ শ্রেণির পদধারীদের বিদ্যমান বেতনস্কেল বাড়িয়ে সিলেকশন গ্রেড প্রদানের জন্য অফিস আদেশ জারি করা হয়।
এ আদেশে বিদ্যমান যথাক্রমে টাকা ৪১০০-৭৭৪০ এর স্থলে ৪২৫০-৮১৪০ এবং টাকা ৪২৫০-৮১৪০ এর স্থলে ৪৪০০-৮৫৮০ সিলেকশন গ্রেড স্কেল প্রদান করা হয়। এতে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর এমএলএসএস এবং দফতরি পদের ন্যায় সমস্কেলভুক্ত অন্যান্য চতুর্থ শ্রেণির পদধারীদের চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে শতভাগ সিলেকশন গ্রেড প্রদেয় হবে। এ সুবিধা আদেশ জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে এবং বেতন নির্ধারণীর সুবিধা ব্যাতীত আদেশ জারির পূর্বের কোনো বকেয়া আর্থিক সুবিধা প্রদেয় হবে না। আদেশে একই সঙ্গে অর্থ বিভাগের ১৭.০৫.১৯৭৮ তারিখের অফিস আদেশের বিধানাবলী রহিত ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ জুলাই বেতন নির্ধারণী বিবরণীতে আদেশটির শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান রাঙামাটিতে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১ জুলাই বেতন নির্ধারণী বিবরণীর এক তথ্যসূত্রে দেখা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আঞ্চলিক কৃষি কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত শান্তি বিকাশ চাকমা চাকরিতে যোগদান করেন ১৯৮৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন নির্ধারণীর আগে বিদ্যমান টাকা-৪১০০-৭৭৪০ স্কেল অনুযায়ী বেতনভাতা পেতেন সর্বসাকুল্যে ৭৮০০ টাকা। কিন্তু জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী নির্ধারণীর পরে শান্তি বিকাশ চাকমার বর্তমান সর্বসাকুল্য বেতন ১২৭০০। এতে দেখা যায়, তার বেতন বেড়েছে ঠিক কিন্তু শতভাগ বাস্তবায়ন নেই। যদি তাই হতো তাহলে তিনি সর্বসাকুল্যে বেতন পেতেন ১৫৬০০ টাকা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শান্তি বিকাশ চাকমাসহ অন্য কর্মচারীরা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জারি করা আদেশ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন। এর আগে ২০১২ সালের ৩ জুন জারি করা বেতন স্কেলের সিলেকশন গ্রেড প্রদানের আদেশ অনুযায়ীও বর্ধিত বেতনভাতা পাননি বলে জানান তারা।
সূত্র: জাগোনিউজ।