আব্দুল হামিদ, বাইশারী:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী- ছাগল খাইয়া সড়কের বটতলী বাজার সংলগ্ন গর্জই খালের উপর ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি ব্রিজ ও বাইশারী বাজার হয়ে বটতলী বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার সড়কে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্পেটিং এর কাজ শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানালেন বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কোম্পানী।
তিনি বলেন, কথায় নয় কাজ করেই জনগণের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। চেয়ারম্যান আরো বলেন, পার্বত্য বান্দরবান জেলার রূপকার পাঁচ বারের সংসদ বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টার এই ফসল আমরা বাইশারীর ৩০ হাজার জনসাধারণ ভোগ করতে যাচ্ছি। তাই তিনি মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বান্দরবান জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন চাকমা বলেন, উক্ত সড়ক ও ব্রীজের জন্য টেন্ডার হয়ে গেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজও পেয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
নাইক্ষ্যংছড়্ উিপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, অলরেডি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে এবং অচিরেই কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয় সাবেক ইউ,পি সদস্য আজিজুল হক বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত তারা মাত্র একটি ব্রীজের অভাবে চরম দুর্ভোগে ছিল। অবশেষে ব্রীজটি নির্মাণ গেলে প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার পাহাড়ী-বাঙ্গালীর দুঃখ দূর্দশা লাঘব হবে।
স্থানীয় ইউ,পি মেম্বার আব্দুর রহিম বলেন, সড়কের কার্পেটিং ও বটতলী বাজার সংলগ্ন গর্জই খালের উপর ব্রীজটি নির্মাণ হলে জনগণের পাশাপাশি শত শত রাবার শ্রমিক, বাগান মালিক সহজে মালামাল আনা- নেওয়া করতে করবেন।
সরজমিনে এলাকা ঘুরে স্থানীয় জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কারবারী, শিক্ষক সহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাইশারী বাজার হয়ে বটতলী বাজার সংলগ্ন গর্জই খালের উপর মাত্র একটি ব্রীজের অভাবে ১৪ কিলোমিটার ইট বিছানো সড়কটি জনগণের কোন উপকারে আসছে না। ১৯৯৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল দীর্ঘ ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত। কিন্তু মাঝপথে খালের উপর একটি ব্রীজ না থাকায় পুরো সড়কটি অকেজো অবস্থায় পড়েছিল। ব্রীজটি নির্মাণ হলে পাল্টে যাবে পুরো দশ গ্রামের চিত্র। পাশাপাশি উক্ত সড়কের উভয় পাশে রয়েছে কয়েক হাজার একর রাবার বাগান। বর্তমানে রাবার বাগানের কষ আহরণ করে উক্ত সড়ক দিয়ে কাঁধে বহন করে নিয়ে আসতে চরম দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। যদি সড়ক ও ব্রীজের কাজ শেষ হয় সরাসরি গাড়ী যোগে সকল মালামাল আনা-নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানালেন নাজমা খাতুন রাবার বাগানে সিনিয়র ব্যবস্থাপক মোঃ আল আমীন। তিনি আরো বলেন, ব্রীজটি নির্মাণ হয়ে গেলে কমে যাবে সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, খুন-খারাবি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সহজে গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে।
সরজমিনে আরো দেখা যায়, দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ধান, কলা, ভুট্টা, শাক-সবজি, সহজে বাজারে এনে নায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকেরা। তবে ব্রীজটি না থাকায় লাখ লাখ টাকা কৃষি পণ্য পচন ধরে যাচ্ছে। কারণ কাঁধে বহন করে দীর্ঘ পথ আনা-নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজাতি নেতা বাবু নিউহ্লামং মার্মা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বলেন, দীর্ঘকাল পরে হলেও তাদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের কথা শুনে তিনি ভগবানের নিকট প্রার্থনা করবেন, যাতে করে অতিসত্তর কাজগুলো শেষ হয় এবং পাহাড়ী বাঙ্গালীদের এই কষ্ট মুছে যায়।