শাহারীয়ার ওয়াহেদ
গর্জনিয়া, রামু।
লক্ষ ক্রোশ হেঁটে আসা
জট পাকানো পা,
লুকোচুরি আর জন্মান্তরের খেলায় কোটি বাঙ্গালের মা,
পুরু লেন্সের চশমা চোখে অভিজ্ঞ বুড়ীর মত,
অপত্যস্নেহে গোর্কির মায়ের মত চোখ ভরা জলে যুদ্ধরত ।
পুষ্টিহীন শিশুগুলো বেড়ে ওঠে বলহীন পুরুষে,
লুটপাট,ধর্ষণ,দখল,
শত শত জারজ ঔরসে,
যা পায় তার সবই খায়
নাহি থাকে জমা,
তোমার যোগ্য নই।
তাই চুপ থাকি, চাই শুধু ক্ষমা ।
সহস্র বছরের জন্ম-মৃত্যু,
প্রেম-শাদী ঘিরে।
বুড়ী ঘুরে পদ্মা।
মেঘনা,যমুনা নীল সাগর তীরে,
ঘুরে ঘুরে হাটেঁ নিরবে,
সহস্রাব্দের স্মৃতিতে ডুবে,
কবে হবে জন্ম আবার!
কবে জন্মাবে নব দিনমণি পূবে ?
কালো-সাদা পোড়ার গল্প
ঘুরে ঘুরে মুখে।
ভুলে গেছে জন্মের কথা।
হয়ত কোন প্রাগৈতিহাসিক যুগে!
গৌড়,বঙ্গ,পুন্ড্র,হরিকেল,
সমতট,বরেন্দ্র,
জমা করে যত ইতিহাস স্নায়ুরন্দ্র।
কখনো আর্য,মৌর্য,গুপ্ত,
পাল,সেনের দখল,
কখনো পরাজিত
প্রতাপশালী মোঘল,
আক্রমণ চালায় গ্রিক,শক,পহলব,কূষাণ,
বাংলার প্রেমে পড়ে তুর্কী,হাবসি,আফগান ।
কেহ নাম দেয় গঙ্গাঋদ্ধি,
কারো নাম ইকতা,
কতশত রাজা হয় কতশত মুকতা,
হাজার মেহমান আসে,
কথা কয় হাজার সুর,
কত কেহ চিঠি লিখে
প্রিয় বুলগাকপুর ।
বাংলা প্রথম যবে স্বাধীন আবাদ,
সোনারগাঁও,সাতগাঁও,ফিরোজাবাদ,
ইলিয়াস শাহ দেয় শাহী মান,
ইলিয়াস শাহ ই স্বাধীন
শাহ-ই-বাঙ্গালিয়ান ।
প্রস্তুত হয় তোমার সন্তানরা
প্রাণ দিতে,
আফগান আসে,আর্য আসে
মসনদ নিতে,
শুরু হয় লোভ,অবিশ্বাসের গান,
স্বাধীন তরবারি ঘুরায়
বঙ্গশার্দূল ঈশাখান ।
বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ,
জারজ রা সব বাংলা বিকে
খোঁজে মিরাজ,
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী খোঁজে ক্ষমতার খণি,
পলাশীর প্রান্তে ডুবে যায়
স্বাধীন দিনমণি ।
যাত্রা শুরু হয় সভ্যতা বদলের,
বাঙ্গালী ভাগ হয়
বহুমতের বহু দলের,
ইংরেজের কূট চাল
সংস্কৃতি মুছে যায়,
আজও বহু জারজ
বাংলায় ঘুরে বেড়ায় ।
ওরা চলে যায় তোমায় বন্ধক রেখে,
কত সন্তান প্রাণ দেয়
স্বাধীনতার ছবি এঁকে,
নতুন জমাদার বলে ঊর্দূ বল,
নয় গলা টিপে ধরে,
ওরা জানতোনা কত বিদ্রোহ
এ মনের ঘরে ।
আসে কত সূর্য সন্তান, আসে মুজিবর,
রক্তস্নানে শাদী হয়ে আসে নব বর,
কোথায় তোমার ঘর বুড়ী?
কোথায় তোমার দেশ ?
বুড়ীর চিন্তাস্রোত ভেঙ্গে যায়,
দীর্ঘশ্বাস ফেলে-বাংলাদেশ ।