যশোরের চৌগাছার পাশাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন রহমানের বিরুদ্ধে অন্তত ৩০টি হিন্দু পরিবারকে নির্যাতন করে ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এর মধ্যে মামলা করা হয়েছে জানিয়ে তাকে ধরিয়ে দিতে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট আনিসুর রহমান।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত শুক্রবার যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শাহীনের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “শাহীন ও তার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার অন্তত ৩০টি হিন্দু পরিবার দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। সংখ্যালঘু পরিবারের এক কিশোরীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের ভয় দেখিয়ে তিন বিঘা জমি লিখে নেওয়া হয়েছে। এলাকার ত্রাস শাহীন ও তার বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।”
প্রায় পাঁচ বছর আগে পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শাহীন হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তার নির্যাতনে টিকতে না পেরে বাড়ীখালি গ্রামের মোহন, হাজারী, চণ্ডী, বিজয়, বাদল, নিখিল, গোপাল, প্রসেন, দীপক, নিতাই, পবিত্র, অজিতের তিন ছেলে, মহাদেব, শান্তিরামের ছেলে, বলয়, তুষার, তপন, কুশপদ, দীপক, বিমল সপরিবারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া বাড়ীখালি গ্রামের ধীরেন, রানীয়ালি গ্রমের পঞ্চানন বিশ্বাস, মালিগাতি গ্রামের জয়দেব ও বড়গোবিন্দপুর গ্রামের কার্তিক ভিটেছাড়া হয়েছেন।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, “শাহীন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ডা. মহিতোষের কিশোরী মেয়েকে দুই দিন আটকে রেখে গণধর্ষণের ভয় দেখিয়ে তিন বিঘা জমি লিখে নেওয়া হয়েছে। পরে ওই পরিবার দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।”
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শাহীনকে কোনো দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থেকে যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
“যদি তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে সংখ্যালঘুরা ভোট বর্জন করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসীম কুণ্ডু, সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস রতন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোগেশ দত্ত উপস্থিত ছিলেন।
শাহীন চেয়ারম্যানের অত্যাচারের বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ এগিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানান রানা দাশগুপ্ত।
এর আগে পাশাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে শাহীনকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারের ঘোষণা দেন জেলা পুলিশ সুপার।
আনিসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পূজা উদযাপন পরিষদ চৌগাছা শাখার পক্ষ থেকে আমাকে ২১টি পরিবারের তালিকা দেওয়া হয়েছে, যারা শাহীনের সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।”
বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সারোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন বলে জানান তিনি। সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
তিনি বলেন, “কমিটিকে তদন্ত করে আগামী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তরা সাহস না পাওয়ায় পুলিশই বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলার দুই নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।”
ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে প্রয়োজনে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ভীতির মধ্যে জীবনযাপন করছেন। সে কারণে গ্রামের স্কুলে ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ করেছি। সেখানে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা শাহীন চেয়ারম্যানকে যশোরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
“আমি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দিয়েছি, হিন্দু নির্যাতনের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো হবে। শাহীন চেয়ারম্যান যত বড় নেতার আশ্রয়ে থাকুক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। তার অবস্থান যে কেউ ফোনে জানাতে পারলেও তাকে ঘোষিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’’
ওই সম্প্রীতি সমাবেশে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
বিডিনিউজ