ইলা মুৎসুদ্দীঃ
১। প্রাণীহত্যা হইতে বিরত নর-নারীগণ জন্ম-জন্মান্তরে খর্বতা, বিকলাঙ্গতা প্রভৃতি দোষ বর্জিত হইয়া পরিপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পন্ন ও দীর্ঘায়ু লাভী হন। তাঁহারা বীর পরাক্রম, বেগবান, সুপ্রতিষ্ট পদ বিশিষ্ট হন। দেহ সুন্দর, কোমল, পবিত্র ও মহাশক্তিশালী হয়। বাক্যালাপ কর্ণ-সুখকর ও জড়তাশূন্য হয়। তাঁহাদের পরিষদবর্গকে কেহ বিভেদ করিতে পারে না। তাঁহারা নির্ভীক ও রক্ষক হন। পরের আঘাত জনিত অপমৃত্যু তাঁহাদের হয় না। তাঁহারা জনবহুল পরিবার সম্পন্ন হন। দেহ রূপ লাবণ্যময়, সুশ্রী, সুলক্ষণ ও সৌষ্ঠবময় হয়। চিরসুস্থ, শোকহীন ও বিচ্ছেদ-বেদনাহীবিহীন হইয়া সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাত্রা নির্বাহ করেন। মৃত্যুর পর আনন্দময় স্বর্গ প্রাপ্তি ঘটে। প্রাণীহত্যাকারীদের ফল যে এত দ্বিপরীত হইবে তাহা বলাই বাহুল্য।
২। চুরি হইতে বিরত নর-নারীগণ জন্মে জন্মে ধন-ধান্য ও মনোজ্ঞ ভোগ সম্পদ লাভ করিয়া থাকেন। লব্ধ ভোগ-সম্পদ চিরকাল নিখুঁতভাবে স্থায়ী হয়। অভীষ্পিত বস্তু অনায়াসেই লাভ করেন। তাঁহাদের সম্পত্তি রাজা, চোর, ডাকাত, অগ্নি, জল, যক্ষ ও শত্র“ কর্তৃক কিছুতেই নষ্ট হয় না। মনুষ্যদের মধ্যে তাঁহারা শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন। ”নাই” শব্দ কখনও তাঁহাদের শ্র“তি গোচর হয় না। এই সৎপুরুষগণ অতীব সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাত্রা নির্বাহ করিয়া মৃত্যুর পর দিব্য আনন্দময় স্বর্গে জন্ম ধারণ করেন। আর যাহারা চৌর্য্য-কর্ম (চুরি) হইতে বিরত নহেন তাহাদের ফল খুবই কঠিন।
৩। কাম মিথ্যাচার হইতে বিরত নর-নারীগণ শত্র“হীন হন। দেব নরের প্রিয় হন। উৎকৃষ্ট খাদ্য-ভোজ্য-অন্ন-পানীয়, মনোজ্ঞ পোষাক-পরিচ্ছদ ও শয্যাদি প্রচুর পরিমাণে লাভ হয়, সুখে নিদ্রা যান। সুখে জাগ্রত হন, চতুর্বিধ অপায়ে জন্মগ্রহণ করেন না। পুরুষগণ স্ত্রীত্ব বা নপুংসকত্ব ও বন্ধ্যাত্ব হইতে মুক্ত হন। সতী-সাধ্বী রমণীগণ ক্রমান্বয়ে পুরুষত্ব প্রাপ্ত হন। তাঁহাদের ক্রোধ ও শত্র“হীন বলা হয়। তাঁহারা প্রত্যক্ষদর্শী হন। সভা সমিতিতে নির্ভীক ও নিঃসংকোচ চিত্তে গমন ও উপবেশন করেন। কাম মিথ্যাচার বিরত স্ত্রী পুরুষের মধ্যে পরষ্পরের প্রিয়ভাব বর্ধিত হয়। ইন্দ্রিয় ওলক্ষণসমূহ পরিপূর্ণ হয়। শংকা ও কৌতুহল শূন্য হয়, ভয় ও প্রিয় বিচ্ছেদ, দুঃখ বিহীন হইয়া সুখে দিনাতিপাত করেন। মৃত্যুর পর স্বর্গপরায়ন হন। আর দুশ্চরিত্র দুরাচার নর-নারীগণ ইহার বিপরীত ফলই ভোগ করিয়া থাকে।
৪। মিথ্যা কথনে বিরত সত্যবাদী নর – নারীদের জন্ম – জন্মান্তরে ইন্দ্রিয় সমূহ সুপ্রসন্ন হয়, মনোহারী – মধুর ও অনর্গল বাক্য ভাষী হন, দন্ত রাজী সমান সুশ্রী, শুভ্র ও বিশুদ্ধ হয়। তাঁহাদের দেহ নাতি – দীর্ঘ, নাতি – হ্রস্ব , নাতি কৃশ, নাতিস্থুল, মধ্যমাকার, সুখ – সংস্পর্শ ও কমনীয় হয়। মুখ হইতে সর্বদা পদ্ম – গন্ধ নিরসৃত হয়। পরিজন বর্গ প্রাণপনে তাঁহাদের সেবা – শুশ্রুষা ও আদেশ পালন করে। তাঁহাদের জিহ্বা পদ্ম – দলের ন্যায় কোমল রক্তিম বর্ণ ও পাতলা হয়। তাঁহারা ঔদ্ধ্যতা ও চঞ্চলতা বর্জ্জিত হন এবং মৃত্যুর পর স্বর্গ লাভ করেন। আর মিথ্যাবাদীদের তার ফল বিপরীতে।
৫। নেশা সেবন হইতে বিরত নর – নারীগণ জন্মে জন্মে অতীত, অনাগত, বর্তমান করণীয় কর্মে সুদক্ষ ও ক্ষিপ্রকারী, অনুম্মত্ত ও স্মৃতিমান হন। প্রজ্ঞা, উদ্যোগ নিরলেস্যতা, অজড়তা, অদ্বন্ধতা, অপ্রমত্ততা ও নির্ভীকতা প্রভৃতি গুণে তাঁহাদের নিকট বিদ্যমান থাকে। তাঁহারা পর গুণ মর্দ্দন ও পরকে হিংসা করেন না। সব্বর্দা, মিথ্যা, বৃথা, কটুও ভেদ বাক্য পরিত্যাগ করে সত্য বাক্যই ভাষণ করেন। দিবা – রাত্র তন্দ্রা বিহীন কৃতজ্ঞ, অকৃপণ, দানপরায়ন, শীলবান, সরল, ক্ষমাশীল, পাপের প্রতি লজ্জা ও ভয়শীল, অকপট, মহাজ্ঞানী, মেধাবী, পন্ডিত, ভাল – মন্দ বোধজ্ঞ ও সকলের আনন্দদায়ক হন। তাঁহারা মৃত্যুর পর সমস্ত দিব্য – সুখ সম্পদে পরিপূর্ণ স্বর্গ লোকেই উৎপন্ন হন। নেশা সেবন হইতে বিরত নর – নারিগণ জন্মে জন্মে এই মহাফল লাভ করিয়া থাকেন। ইহার অন্যথায় দারুন দুঃখ – দায়ক অপায়াদিতে জন্মগ্রহন করিয়া অসীম দুঃখ ভোগ করিতে হয়।
তৃষ্ণার বশীভূত ব্যক্তিগণ শীল লঙ্ঘন করিয়া অনন্ত দুঃখ ভোগের পথ প্রশস্ত করে। তৃষ্ণাবদ্ধ মানবের জীবন ব্যাধ – পাশে আবদ্ধ পক্ষীর ন্যায় নিত্য দারুন বিপদসঙ্কুলময়। সুশীলতাই এই বিপদ হইতে অব্যাহতি লাভের প্রধান উপায়। শীল পরিপূর্ণ হইলে সমাধিষ্কন্ধ পরিপূর্ণ হইয়া ক্রমান্বয়ে দুঃখের নিবৃত্তি হয়।