বাঁকখালী নদী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নদী। কক্সবাজার এই নদীর তীরে অবস্থিত।
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎসারিত কিছু স্রোতধারা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে মিলিত হয়ে সম্মিলিত ধারায় বাঁকখালী নদীর সৃষ্টি করেছে।
নদীটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে পতিত হয়েছে। এই নদী খরস্রোতাও প্রায় ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে ৬০ কিঃমি উত্তরে মাতামুহুরী মোহনা এবং মাতামুহুরী মোহনা থেকে আরো ৬০ কিলোমিটার উত্তরে শঙ্খ নদীর মোহনা। এখান থেকে আবার ২০ কিঃমি উত্তরে কর্ণফুলী নদীর মোহনা। আরাকান মহাসড়কের উপর কর্ণফুলী সেতু, শঙ্খ সেতু, মাতামুহুরী সেতু ও বাঁশখালী সেতু রয়েছে।
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) আরাকান দখল করে উৎপীড়ন-নির্যাতন শুরু করলে হাজার হাজার শরনার্থী বাঁকখালী নদী তীরবর্তী রামু ও কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স এদের পুনর্বাসন করেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের সমাধী বাঁকখালী নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এই নদী অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। নদীপথে এখানে এসেছে বহু আরব বণিক, পর্তুগিজ ও হার্মাদ-আরাকান জলদস্যু। পরে এসেছে ব্রিটিশ বণিক শাসকরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কক্সবাজারে ব্রিটিশ-মার্কিন সৈন্যসহ মিত্র সৈন্যরা এসে বাঁকখালী নদীতে কাঠের তৈরী জেটি নির্মাণ করে। এখানে অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য জেটিতে জাহাজ ভিড়ত।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানবাহী জাহাজ ‘বিক্রান্তসহ অন্যান্য জাহাজ থেকে মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা জলযানযোগে বাঁকখালী নদী হয়ে কক্সবাজারে অবতরণ করেন। নদীপাড়ে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীসহ স্থানীয় মানুষ তাদের স্বাগত জানায়।
চট্টগ্রাম বিভাগের কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গু, বাঁকখালী, নাফ নদী, ডাকাতিয়া, তিতাস, মুহুরী নদীর মধ্যে বাঁকখালী গুরুত্বপূর্ণ এক নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এখানকার জনবসতি। স্থানীয় মানুষদের জীবন জীবিকা নির্বাহের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় বাঁকখালী।
কালে বাঁকখালী ক্রমশ এই জনপদের মানুষের জন্য অভিশাপ রূপে আবির্ভূত হয়। বিশেষ করে বাঁকখালীর ভাঙ্গন এখানকার বাসিন্দাদের জীবন এবং বসতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রতি বছর বাঁকখালী নদীর পাড় যেভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছে, এই ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা না হলে নদীর তীরবর্তী কোন উন্নয়ন কাজ টিকে থাকবে না। উন্নয়নের নামে বছর বছর রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় করার আগে বাঁকখালীকে অনিয়ন্ত্রিত ভাঙ্গন থেকে বাঁচাতে হবে। নদী খনন, ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলোতে ব্লক স্থাপন, ধসে পড়া ব্লকগুলো পুনঃস্থাপন ও মেরামত, দখল, দূষণ, তামাক চাষ ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করা সহ নানান পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনসহ সচেতন নাগরিকদেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।