চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের ম্যাচে নেই আগের সেই আবহ-উত্তেজনা। পুরোনো ঝাঁজ ফেরাতে পারল না মাঠের ক্রিকেটও। মোহামেডানের দাপটে আবাহনীর অসহায় আত্মসমর্পণে মিরপুরে মঞ্চস্থ হলো একপেশে এক ম্যাচ।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আবাহনীর ১৮৩ রান মোহামেডান পেরিয়ে যায় ৩৭ বল বাকি রেখে।
৬ ম্যাচে ৫ জয়ে ষষ্ঠ রাউন্ড শেষে শীর্ষে থাকা নিশ্চিত করল মুশফিকুর রহিমের মোহামেডান। দলবদলের অন্যতম সেরা দল তামিমের আবাহনীর ৬ ম্যাচে জয়-পরাজয় সমান ৩টি করে।
ম্যাচের উত্তেজনা অনেকটা শেষ হয়ে যায় শুরুর আধ ঘণ্টাতেই। শের-ই-বাংলার উইকেট যথারীতি ছিল ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। কিন্তু একের পর এক বাজে শটে নিজেদের পতন ডেকে আনলেন আবাহনীর ব্যাটসম্যানরা।
অধিনায়ক তামিম ইকবালের ওপর দলের অতি নির্ভরতাও প্রমাণ হলো আরও একবার। শুভাশিস রায়ের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে প্রথম ওভারেই ফেরেন দলের সবচেয়ে বড় ভরসা। আবাহনী কেঁপে ওঠে তাতেই।
আরেক প্রান্তে নতুন বল হাতে নেন হাবিবুর রহমান। নিজের তৃতীয় ওভারে এই অফ স্পিনার ৩ বলের মধ্যে ফেরান দু:সময়ের বৃত্তে থাকা লিটন দাস ও অভিষেক মিত্রকে। ৬ ওভার শেষে আবাহনীর রান ৩ উইকেটে ১৫।
আবাহনীর বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা আর ম্যাচের উত্তেজনার অপমৃত্যু হয়ে গেছে ততক্ষণে।
ভারতীয় ব্যাটসম্যান মানবিন্দর বিসলা (২৩) আউট হয়েছেন থিতু হয়েও। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোসাদ্দেক হোসেন চেষ্টা করেছেন জুটি গড়ার। কিন্তু বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়ে দুজনই আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটু শটে।
রানে থাকা শান্ত এদিনও খেলছিলেন বেশ স্বচ্ছন্দেই। কিন্তু এনামুল জুনিয়রের প্রথম ওভারেই হঠাৎ তার খায়েশ হলো বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারার। ধরা পড়লেন লং অনে (৪২)।
দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে আসা শুভাশিষের বাউন্সারে অযথাই ব্যাট চালিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন মোসাদ্দেক (২৭)। ওই ওভারেই আরেকটি বাউন্সারে শুভাশিস ফেরান সাকলাইন সজীবকে। ১১৭ রানে ৭ উইকেট হারানো আবাহনীর তখন দেড়শ’ করা নিয়েই টানাটানি।
অলরাউন্ডার আবুল হাসানের সঙ্গে তখন অভাবনীয়ভাবে দাঁড়িয়ে যান তাসকিন আহমেদ। অষ্টম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন দুজন।
লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে আগের ৩৪ ম্যাচ মিলিয়ে যিনি করেছিলেন ৩৭ রান, সেই তাসকিন এক ম্যাচেই ছাড়িয়ে যান আগের সব ম্যাচের রানকে। ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। খানিকটা ভদ্রস্থ পুঁজি পায় আবাহনী।
এমন ব্যাটিং উইকেটে ফর্মে থাকা দলের বিপক্ষে ১৮৩ রান নিয়ে লড়াই করাও কঠিন। আবাহনী সেটি পারেওনি, পেশাদার রান তাড়ায় অনায়াসে জিতেছে মোহামেডান।
তাসকিনের বলে আঙুলে ব্যথা পেয়ে ১৩ রানে মাঠ ছাড়েন ওপেনার সৈকত আলি। তবে আরেক ওপেনার ইজাজ আহমেদ ও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা উপুল থারাঙ্গা পাত্তাই দেননি আবাহনীর বোলিংকে।
তিন ছক্কায় ৪২ করে ফিরেছেন ইজাজ। মুশফিক উইকেটে গিয়েই ইনসাইড আউটে ছক্কা মেরেছন বাঁহাতি স্পিনার অমিত কুমারকে। তাসকিনকে কাট করতে গিয়ে অবশ্য ফিরেছেন ১৭ রানেই।
থারাঙ্গা সুযোগ দেননি একবারও। ৭৭ রান করে ফিরেছেন দলের জয় সঙ্গে নিয়েই। ৬ ম্যাচে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের এটি চতুর্থ অর্ধশতক। ৯৪ গড়ে ৩৭৬ রান করে আপাতত তিনিই লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার।
২৫ রান করতে নাঈম ইসলাম খেলে ফেলেন ৫৯ বল। চাপহীন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং উইকেটে নাঈমের ম্যাড়মেড়ে ব্যাটিংই যা একটু বিরক্তি উদ্রেক করেছে শেষ দিকে।
এটুকু ছাড়া মোহামেডান ছিল প্রায় নিখুঁত। দুর্দান্ত দলীয় পারফরম্যান্সে মুশফিকের দল বার্তা দিয়ে রাখল আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী: ৪৮.৪ ওভারে ১৮৩ (তামিম ৪, লিটন ৩, অভিষেক ৭, বিসলা ২৩, শান্ত ৪২, মোসাদ্দেক ২৭, আবুল হাসান ২৮, সাকলাইন ০, তাসকিন ৩৮*, জুবায়ের ০, অমিত ০; শুভাশিস ৩/৩৪, হাবিবুর ২/৩০, নাঈম জুনিয়র ২/৩০, নাঈম ১/৩৫, এনামুল জুনিয়র ১/২৯, মিলন ০/১১, আরিফুল ১/১১)।
মোহামেডান: ৪৩.৫ ওভারে ১৮৫/২ (সৈকত ১৩ (আহত অবসর), ইজাজ ৪২, থারাঙ্গা ৭৭*, মুশফিক ১৭, নাঈম ২৫*; তাসকিন ১/৪২, অমিত ১/৩৪, আবুল হাসান ০/৫, সাকলাইন ০/৩০, জুবায়ের ০/২৯, শান্ত ০/৩, অভিষেক ০/৫)।
ফল: মোহামেডান ৮ উইকটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শুভাশিস রায়
[বিডিনিউজ]