অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি দেশকে উন্নত করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা, আর এ কাজে পুলিশ বাহিনী সফল হয়েছে।
রোববার ঢাকার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রমের উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের জনগণের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এখন মানুষের কিন্তু পুলিশের ওপর একটা আস্থা বিশ্বাসও ফিরে এসেছে, যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বলে মনে করি।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত সাড়ে নয় বছরে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাংলাদেশের হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে স্বীকৃতি বাংলাদেশ পেয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে আইনশঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দেন সরকারপ্রধান।
মেট্রোপলিটন পুলিশ হওয়ায় গাজীপুর আর রংপুরের মানুষের সেবা পাওয়া আরও সহজ হবে- এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এ দুই অঞ্চলের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও তরান্বিত হবে, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।”
দেশের সব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, সে বেষয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময় যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, এখন তা হয়েছে ১৬ কোটি।
“জনগণের সেবা সময়মত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রংপুরকে আলাদা প্রশাসনিক বিভাগ করা হয়েছে। শিল্পনগরী গাজীপুররকে মট্রোপলিটন সিটি করা হয়েছে। মানুষ যাতে সেবা পায় সেজন্যই রংপুর ও গাজীপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ গড়ে তোলা হয়েছে।”
আর সেবা দিতে গিয়ে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে পুলিশ বাহিনীকে যে কষ্ট স্বীকার করতে হয়, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
“সত্যি কথা বলতে কি, আসলে সব থেকে বেশি কষ্টটা তাদেরই করতে হয়, তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নাই, সময় নাই। মানুষ যখনই চাচ্ছে তখনই তাদের ছুটে যেতে হচ্ছে, তাদের কাজ করতে হচ্ছে…।”
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, পুলিশ মাত্র ২০ শতাংশ রেশন পেত। এখন তা বাড়িয়ে শতভাগ করা হয়েছে। পুলিশের সংখ্যা জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল ছিল। তাদের চিকিৎসা, আবাসনের ভালো ব্যবস্থা ছিল না। সরকার সেসব বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছে।
“আমরা রাজারবাগে হাসপাতাল নির্মাণ করে দিয়েছি, আবাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি। আমি নিজেই দেখেছি, টিনের ঘর, বৃষ্টি আসলে পানি পড়ে, বিশ্রাম নিতে পারে না, একজন ঘুমালে পরে আরেকজন… এরকম একটা অবস্থা ছিল। প্যারেডের জন্য জায়গা ছিল না, মাঠের মধ্যে প্যারেড হত, বৃষ্টি হলে প্যারেড করতে পারত না।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি এ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করান, উন্নত করার। এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাতে মানুষকে সেবা দিতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি রেখেও আমরা কাজ করেছি। আজ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আমরা খুলে দিচ্ছি এইজন্য যে এই দুটি এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা যেন নিশ্চিত হয়।”
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এই দেশে আমাদের কিছ জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস বাংলা ভাই সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ বাহিনী এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার বলিষ্ঠ ভূমিকা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
“তারা সময়োচিত পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন বলেই আমরা জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি।”
নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যে নাশকতা দমনে পুলিশের ভূমিকার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বিএনপি-জামাত জোটের অগ্নি সন্ত্রাসেরও শিকার হযেছে আমাদের পুলিশ বাহিনী। প্রায় ২৭ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে এদের হাতে। তাদের আত্মার মাগফেরাত আমরা কামনা করি।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, এখন দেশকে গড়ে তোলার কাজটি তার সরকার করছে।
“আমরা দেশকে গড়ে তোলার জন্য সকল মানুষের সেবাটা নিশ্চিত করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়েছি, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং তাদের প্রমোশনের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।
“এই যে নতুন মেট্রোপলিটন দুটো করলাম, এতে অনেক পুলিশ সদস্যের প্রমোশনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া পদের দিক থেকেও আমরা একটু আপগ্রেড করে দিয়েছি।”
গাজীপুর ও রংপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর সেখানে মহানগর পুলিশ প্রতিষ্ঠায় ২০১৫ সালে মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়।
সংসদে সেই আইন পাস হলে গঠিত হয় গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও রংপুর গাজীপুর মহানগর পুলিশ। দুই নগরে নিয়োগ দেওয়া হয় পুলিশ কমিশনার।
গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান জানান, নতুন গঠিত আটটি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। ইতোমধ্যে ১ হাজার ১৫২ জন লোকবলও নিয়োগ করা হয়েছে।
আর রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ যাত্রা শুরু করছে ছয়টি থানা নিয়ে। মোট ১ হাজার ১৮৫ জন লোকবল নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করছে এই নগরীর পুলিশ।
দুই মহানগর পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাননের কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। আর ঢাকার গণভবনের অনুষ্ঠানে পুলিশ ও র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জননিরাপত্তা সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন। পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুর ও রংপুরে কথা বলেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ