অনলাইন ডেস্কঃ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,কোনো সাংবাদিক ‘মিথ্যা তথ্য’ না দিলে বা ‘বিভ্রান্ত’ না করলে এ আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “উদ্বিগ্ন তারা বেশি হবে, যারা এতদিন ধরে খুব তৈরি হয়ে আছে,… নির্বাচনের কাছাকাছি… মানে আমাদেরকে ভালো করে ঘায়েল করার জন্য যারা খুব বেশি ডকুমেন্ট তৈরি করে বসে আছে বা একটা একটা করে ছাড়ছে…
“তারা উদ্বিগ্ন হতে পারে কারণ তারা ভাবছে যে এরকম একটা মিথ্যা নিউজ করব, এটা তো মাঠে মারা যাবে।”
সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির সুরাহা না করেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ওই আইন পাস করা হয়।
সংবাদপত্রের সম্পাদকদের একটি সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ওই আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছে ওইসব ধারা ‘বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি’।
সরকারের তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকরা ওই আইন সংশোধেনর দাবি জানিয়ে এসেছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসে ওই আইন নিয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য প্রকাশের কারণে কারও ক্ষতি হলে সেজন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান এ আইনে নেই, যা রাখা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।
“যদি কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো মিথ্য তথ্য দেয়, তাহলে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে এটা সত্য। যদি ব্যর্থ হয়, সেই সাংবাদিক- যে লিখবে, যে পত্রিকা বা মিডিয়া প্রকাশ করবে বা ব্যবহার করবে, তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। যার বিরুদ্ধে লিখবে, তার যে ক্ষতি হবে, সেজন্য তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যেটা ইংল্যান্ডে আছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যে একজন এমপির বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় বিবিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সবাইকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
“আমি যদি এখন বলি, ২০০৭ এ আমি যখন বন্দি, আমার বিরুদ্ধে যত দুর্নীতির ব্যাপারে যত রকমের তথ্য বিভিন্ন পত্রিকা প্রচার করেছে, বা এখনও আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা নিউজ দিয়ে দিল, ছবি টবি দিয়ে নিউজ দিল, তদন্ত করে প্রমাণ হল, যে এটা মিথ্যা, তারপরে কি হয়?
“যার বিরুদ্ধে করে, তার জীবনটাতো শেষ। তার তো ড্যামেজ হয়ে গেল। কিন্তু যে পত্রিকাটা করল, সে কি শাস্তি পেল? তার তো কোনো সাজা হল না, তারা তো বহাল তবিয়তে তত্ত্ব কথা বলে বেশ বুক উঁচু করে চলছে সমাজে।”
বিভিন্ন সময়ে পদ্মা সেতু, মিগ টোয়েন্টি নাইন জঙ্গিবিমান কেনা এবং ফ্রিগেট কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হওয়ার কথাও সংবাদ সম্মেলনে মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা খুব উদ্বিগ্ন আমি বুঝলাম, কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা কে দেখবে? যারা ভিকটিম হচ্ছে তাদের উদ্বেগটা কে দেখবে? তাদের কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবেন? ওই জায়গাটার কমতি আছে, যেটা ইংল্যান্ডের আইনে আছে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার আগে সরকার বিভিন্ন দেশের আইন পর্যালোচনা করেছে এবং দেশে সাংবাদিকদের সঙ্গেও যে আলোচনা করেছে- সে প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “এরপর এসে হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন, কিসের জন্য?
“কারও যদি অপরাধী মন না থাকে, বা ভবিষ্যতে অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
নতুন আইনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিভিন্ন অপরাধের বিচারের বিষয়ে যা বলা ছিল, সেগুলোর সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধের বিষয়গুলো যুক্ত করেই নতুন আইন করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “আমি যতক্ষণ আছি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, ভয়ের কিছু নেই। ভয় পাবে তারা, যারা অপরাধ করবে।”
সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন গণভবন থেকে এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে।
সূত্রঃ বিডিনিউজ