অনলাইন ডেস্কঃ
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৩০০নং আসন। এ আসন আবারও ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে নিজেদের কোন্দল মিটিয়ে আওয়ামী লীগের দূর্গে হানা দিতে চায় বিএনপি। এছাড়াও আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ অন্য সংগঠনগুলোও একক প্রার্থী দিয়ে ছিনিয়ে নিতে চায় বিজয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে টানা পাঁচবার নির্বাচিত সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হলেও বিএনপির মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, আর কোন দল কাকে সমর্থন দিচ্ছেন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বান্দরবানে রাজনৈতিক অঙ্গন জমে উঠেছে ।
সংসদীয় এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ৬৯৩ জন। আর পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৫ হাজার ৯৫৭ জন ।
১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হন সাচিং প্রু জেরী। পাল্টা হিসেবে রাজ পরিবারের আরেক অংশ তার বিপক্ষে মাঠে নামে। ২০০১ সালে সাচিং প্রু জেরী ও মাম্যাচিং দুজনই সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন এবং দুজনই আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুরের কাছে পরাজিত হন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পান মাম্যাচিং। তখন সাচিং প্রু নির্বাচন না করলেও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ার কারণে মাম্যাচিং মাত্র ৮৫৩ ভোটে বীর বাহাদুরের কাছে হেরে যান।
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে রাজনীতির মাঠে ক্লিন ইমেজের কারণে বীর বাহাদুর পঞ্চমবারের মতো তার ধারাবাহিক বিজয় অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হন।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পরেও বিএনপির অন্তঃকোন্দল এখনও থামেনি। দুই নেতাকে কেন্দ্র করে বিভক্ত অবস্থায় বিএনপির কর্মীবাহিনী। কোন্দলে বান্দরবান জেলাজুড়ে নাজুক অবস্থা বিএনপির। সাবেক সভাপতি সাচিং প্রু জেরী আর বর্তমান সভাপতি মাম্যাচিং সমর্থকরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো পালন করেন আলাদা আলাদাভাবে। একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য দুই পক্ষই জড়িয়েছে সংঘাত আর মামলায়। আর আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে প্রকাশ্যে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতে না পারলে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হতে পারবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
লামা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আমির হোসেন জানান, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়ে কেন্দ্রে জানানো হয়েছে । দ্রুত উভয়কে নিয়ে বসে সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।
এদিকে, বিএনপি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, মাম্যাচিং যেহেতু জেলা বিএনপির সভাপতি সেক্ষেত্রে ক্ষোভ প্রশমনে এবার সাচিং প্রু জেরীর মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। যদিও সাচিং প্রু জেরী মনোনয়ন পান এরপরও মাম্যাচিং গ্রুপ বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে তার বিপক্ষে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা বলেন, যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তাহলে প্রার্থী যাকেই দেয়া হোকনা কেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো, কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না।
এদিকে, ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর সংগঠন বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তংচঙ্গ্যাকে বহিষ্কার করা হয়। সর্বশেষ দলীয় সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
আর ২০১৫ সালের জুন মাসে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে হামলার অভিযোগে কাজী মুজিবুর রহমানসহ ২২ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর এই দুই নেতা দুই মেরুর হলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় নেতারা ।
এই ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লক্ষী পদ দাশ বলেন, প্রসন্ন, মুজিব দলে থাকা অবস্থায় আমরা একটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হতে পারিনি। তাদের যদি কেউ প্রার্থী হয় তাহলেও বীর বাহাদুরের আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে কোনো প্রভাব পড়বেনা।
বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি একে এম জাহাঙ্গীর বলেন, দলে কোনো সংকট নেই, অতীতে দলের সঙ্গে বেঈমানি করে অনেকে প্রার্থী হলেও তারা পারেনি। তারা সাকসেস হয়নি। সামনেও কেউ নির্বাচনে দাঁড়ালে হবে না এবং আগামী নির্বাচনে বীর বাহাদুর এই নির্বাচিত হবেন।
এ দিকে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা মংপ্রু মার্মা অপহরণ মামলায় বান্দরবান জেলা জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ঘরছাড়া হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জেএসএস। তবে জনসংহতি সমিতির বিরোধিতার কারণে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জলি মং মার্মা বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছুই নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কমেছে।
অন্যদিকে, জেলায় জাতীয় পার্টি ও ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর রাজনীতি থাকলেও ইউপিডিএফ থেকে ছোটন কান্তি তংচঙ্গ্যাকে প্রার্থী হিসেবে আর জাতীয় পার্টি থেকে কেশৈঅং মার্মাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে ।
এদিকে, একসময়ের রাজনৈতিক মিত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এর পাশাপাশি দলটির নেতাকর্মীরা বীর বাহাদুরের ক্লিন ইমেজ, রুমা সাঙ্গু সেতু নির্মাণ, থানচি সাঙ্গু সেতু নির্মাণ ও থানচি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহসহ স্থানীয়দের স্বপ্নের শত শত উন্নয়ন কাজগুলো এলাকার হোম টু হোম দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরে এখন থেকেই নির্বাচনে নিজেদের ঘাঁটি অক্ষুণ্ন রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ