অনলাইন ডেস্কঃ
টেলিভিশন আলোচনা অনুষ্ঠানে কটূক্তির জন্য সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির কাছে ‘প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা’ না চাইলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে নারী সাংবাদিক কেন্দ্র।
সেই সঙ্গে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টাকে কোনো টেলিভিশনের আলোচনায় না ডাকারও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, “ব্যারিস্টার মইনুলকে তার অপরাধ স্বীকারপূর্বক প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। এবং ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের ব্যক্তি আক্রমণ থেকে বিরত থাকবেন।
“দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি দাবি না মানলে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।”
দেশের গণমাধ্যম যাতে ব্যারিস্টার মইনুলকে কোনো ধরনের প্রচারের সুযোগ না দেয় সে আহ্বানও জানান তিনি।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত এক টক শোতে আমাদের অর্থনীতির জ্যৈষ্ঠ সহকারী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার পর থেকে সমালোচনার মুখে রয়েছেন নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
ওই অনুষ্ঠানে মাসুদা ভাট্টি মইনুলকে প্রশ্ন করেছিলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আপনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। আসলেই আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে ওখানে উপস্থিত থাকেন কি না?”
তাকে থামিয়ে দিয়ে মইনুল বলেন, “আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কোনো কানেকশন নেই। আপনার এ প্রশ্ন আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য প্রশ্ন করেন।”
পরে মইনুল হোসেন টেলিফোনে ওই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও সাংবাদিক-কলামনিস্ট মাসুদা ভাট্টি তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিও ব্যারিস্টার মইনুলের সমালোচনা করে তাকে ‘বয়কট’ করতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সংবাদ সম্মেলনে নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, “আমি নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের কাছে আবেদন জানাতে চাই, তারা যেন এমন ব্যক্তিকে নেতৃত্বের আসনে রাখবেন না, যিনি একজন নারী সাংবাদিককে আক্রমণ করতে দ্বিধা করেন না। কারণ এটা হলে এই ঐক্যফ্রন্টটি কেবল বিতর্কিতই হবে।”
টেলিফোনে মাসুদা ভাট্টির কাছে মইনুল হোসেনের দুঃখ প্রকাশ প্রসঙ্গে মিনু বলেন, “সেই ক্ষমাটা কোনোভাবে যথেষ্ট নয়। তিনি শুধু মাসুদা ভাট্টিকে নয়, তিনি নারী সাংবাদিক ও পুরো নারী সমাজকে আক্রমণ করেছেন।
“তার চেয়ে বড় কথা হল, তিনি কোনোভাবে একজন সাধারণ মানুষকেও এভাবে চরিত্রহীন বলে আক্রমণ করতে পারেন না। তিনি নারী হোন, কিংবা পুরুষ। তাতে কিছু এসে যায় না। আমরা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, সেখানে এ ধরনের ব্যক্তি আক্রমণের কোনো সুযোগ নাই।”
মাসুদা ভাট্টি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই মুহূর্তে বিষয়টি আর আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভের ব্যাপার নেই। কারণ আমি মনে করছি আমাকে বা যে কোনো নারীকে এ রকম আক্রমণের শিকার হয়েই এগোতে হবে। বিষয়টি এখন দেশের গণমাধ্যমকর্মীসহ সকল পেশাজীবী নারী ও সচেতন নাগরিকের ওপর আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই আঘাতকারী যখন একজন প্রবীণ আইনজীবী হন, তখন এটি আর আঘাত না থেকে হয় ওঠে চরম অবমাননাকর ও আইনের লঙ্ঘন।”
মইনুল হোসেনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি আমার ও আমার মত অসংখ্য নারীর সম্মানহানির ক্ষতের জায়গাটি উপলব্ধি করবেন এবং প্রকাশ্যে সকলের কাছে মার্জনা প্রার্থনা করবেন।”
লেখিকা আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, “চরিত্রহীনতার অভিজ্ঞতা না থাকলে এ ধরনের কথা বলছেন কীভাবে? বেশি নড়াচড়া করলে থলের বেড়াল বেড়িয়ে যাবে।”
ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, “এটা ক্লিয়ারলি একটা নির্যাতন, মাসুদা ভাট্টি কী অপরাধ করেছিলেন যে তাকে এভাবে নির্যাতন করতে হবে?”
তিনি বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে যারা এ রকম কথা বলে, তাদের আমরা নেতা মানব কি না সেটা এখন সিদ্ধান্তের বিষয়। আর মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে যা হয়েছে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা একটা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য। চরিত্রের সংজ্ঞা লাথি মেরে ভেঙে দিতে চাই।”
এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা বলেন, “মইনুল হোসেন এবং আপনারা যারা নানান সময়ে রাজনৈতিকভাবে কলঙ্কিত, রাজনৈতিক ভাবে চরিত্রহীন, আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন। আজকের এই প্রতিবাদ সকল রাজনৈতিক কলঙ্কিত চরিত্রহীনদের প্রতি আমাদের সকলের প্রতিবাদ। আমরা রাজনৈতিক চরিত্রটা ঠিক করতে চাই।”
জিটিভির সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, “ব্যারিস্টার মইনুল এমন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে শুধু নারীকে অপমান করেননি, পুরো মানবসমাজকে অপমান করেছেন।
”আমাদের টিভিতে তাকে আর কোনো সময় টকশো কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে সুযোগ দেব না, আপনারাও আর তাকে সুযোগ দেবেন না।”