অনলাইন ডেস্কঃ
বিএনপিসহ অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ গঠনের তীব্র সমালোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে।
কয়েকজন সংসদ সদস্য এই ঐক্যকে ‘একটা অশুভ ঘটনার প্রয়াস’ উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনার দাবি জানিয়ে বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং একুশে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের সঙ্গে সংবিধান প্রণেতার দাবিদার ড. কামাল হোসেনের ঐক্য হয় কীভাবে?
রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে এ দাবি জানান সংসদ সদস্যরা। এ নিয়ে আলোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বিএনএফ-এর চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ। তবে সভাপতির আসনে থাকা স্পিকার এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ড. কামাল হোসেন নিজেকে সংবিধান প্রণেতা বলে দাবি করেন। অনেকে তাকে সংবিধান প্রণেতা বলে থাকেন। আমি নিজেও তৎকালীন গণপরিষদের সদস্য ছিলাম। এখানে উপস্থিত আমির হোসেন আমু ও আমিসহ অনেকেরই সেই সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা ছিল। এই ড. কামাল, যিনি নিজেকে সংবিধান প্রণেতা দাবি করেন তিনি কী করে সংবিধান পরিপন্থি দাবি করেন? তাদের দাবি সাংবিধানিক নয়।
তিনি বলেন, যারা সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, গ্রেনেড হামলার দায়ে যে দলের নেতাদের ফাঁসির রায় হয়েছে, কারও কারও যাবজ্জীবন দণ্ড হয়েছে, যাকে (তারেক রহমান) একটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে অভিহিত করা হয়- সেই নেতার যাবজ্জীবন দণ্ড হয়েছে, তাদের সঙ্গে ড. কামাল কীভাবে ঐক্য করেন?
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা নিয়ে সংসদে একদিন সময় নিয়ে বিস্তারিত এবং তথ্যমূলক আলোচনা করতে চাই। এটা একটা অশুভ ঘটনা হতে চলেছে। আমরা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে যেকোনো একদিন এটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। দেশের মানুষকে অনেক কিছু জানাতে চাই। এরজন্য প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করতে চাই। স্পিকার অনুমতি দিলে আমরা ভালো আলোচনা করবো।
তিনি বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ নির্ধারিত হয়। এর ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমাদের সংবিধান প্রণয়ন হয়। বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে এই ড. কামাল বিনাপ্রতিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তোফায়েল বলেন, আরেকটি বিষয়ে এই অধিবেশনে আলোচনার জন্য নোটিশ দেব। গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে অনন্য স্থানে তুলে ধরেছেন। এই বিষয়টি নিয়েও আমরা আলোচনা করতে চাই।
এর আগে বিষয়টির অবতারণা করে বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ড. কামাল হোসেন সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। তিনি নিজেকে সংবিধান প্রণেতা দাবি করেন। কিন্তু সংবিধানের মুখবন্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম রাখা হয়নি। এতদিনে আমরা বুঝতে পারলাম কেন সংবিধানের মুখবন্ধে জাতির পিতার নাম রাখা হয়নি। ড. কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন না, তিনি পাকিস্তানপন্থি ছিলেন। এ কারণেই তিনি সংবিধানের মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধুর নাম রাখেননি উদ্দেশ্যেমূলকভাবেই। এটাতে তার অসততা ও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। এই অসততার জন্য ড. কামাল হোসেনের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সন্তানদের না নেওয়ার দাবি: এদিকে কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে আনা এক জরুরি মনোযোগ আকর্ষণ নোটিশে সংরক্ষিত মহিলা আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী বলেন, রাজাকার, আলবদর, আলশামস আমাদের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে। রক্তেভেজা এই স্বাধীন দেশে সেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সন্তানদের সরকারি চাকরি হতে পারে না। তাই সরকারি চাকরিতে এদের নিষিদ্ধ করতে হবে।