অনলাইন ডেস্কঃ
চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপে বসার দাবি প্রত্যাখ্যানকে আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। একইসঙ্গে এমন মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব। এর জন্য দেশ যদি কোনো গভীর সংকটে পড়ে সে জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী হবে।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী দল ও ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে জোট গঠন এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়ে পরিস্কার প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় ঐক্যের বিষয়ে উদ্যোক্তা হয়েও শেষ পর্যন্ত যোগ দিতে পারলেন না তিনি। এ দুটি বিষয়কে স্বীকৃতি দিলেই জাতীয় ঐক্য হবে। তার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে ‘জাতীয়তাবাদী চেতনা’য় উদ্বুদ্ধ করার পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে যত বেশিসংখ্যক আসনে সম্ভব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার সমকালকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বি. চৌধুরী এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে যুক্তফ্রন্ট সভাপতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়া, আগামী সংসদ নির্বাচন, নিজের দল ও জোটের পরিকল্পনাসহ সার্বিক রাজনৈতিক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে কোন জোটে যাবেন- এমন প্রশ্নসহ বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ না দেওয়ার মূল কারণ জানতে চাইলে বি. চৌধুরী বলেন, প্রথমত, এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যৌথ স্বাক্ষর এবং চুক্তি হয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণায় ৫ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের উল্লেখ থাকলেও এর মুখবন্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতাবিরোধীদের কথা ছিল না। রাজনৈতিক ঐক্যের জন্যই জাতীয় ঐক্য হতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে এবং এটাই ছিল ঐক্যের মূলভিত্তি। দ্বিতীয়ত, সংসদে (সংখ্যাভিত্তিক), মন্ত্রিসভায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। এই দুটি বিষয়কে স্বীকৃতি দিলেই জাতীয় ঐক্য হবে। এই দুই দফায় পরিস্কার প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত যোগ দেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে ড. কামাল হোসেন এবং বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমকে প্রথম থেকেই আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা যুক্তফ্রন্টে আসতে রাজি হননি। সে জন্য তাদের ছেড়েই যুক্তফ্রন্ট করেছিলাম।
২০ দলীয় জোট ছেড়ে দুটি দল বিকল্পধারায় যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি এবং বিকল্পধারার ভাঙনকে কীভাবে দেখেন-এ বিষয়ে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি ছাড়াও আরও অনেক দল যুক্তফ্রন্টে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা আমাদের পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদী চেতনা পছন্দ করে আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। বিকল্পধারা থেকে বহিস্কৃত দুই ব্যক্তি আইনত বিকল্পধারা ভাঙতে অথবা নতুন করে বিকল্পধারা গঠন করতে পারেন না। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ার পরই তাদের চূড়ান্তভাবে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। ড. নূরুল আমিন বেপারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফুলটাইম অধ্যাপক হয়ে কীভাবে রাজনৈতিক দলের ফুলটাইম প্রেসিডেন্ট হন সেখানেও নীতি-নৈতিকতা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রশ্ন রয়েছে।
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’ যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে সে সময় স্বাধীনতাবিরোধী দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ককারী দলের সঙ্গে জোট না গড়া, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং নির্বাচনে জোটের দেড়শ’ আসন চেয়েছিল বিকল্পধারা। বর্তমানে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোও প্রায় ১০০ আসন বিএনপির কাছে দাবি করবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা যে সমস্ত মূলনীতির ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য করতে চেয়েছিলাম, তা ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোও ধীরে ধীরে বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে, একটু দেরি হয়ে গেল না?
যুক্তফ্রন্টকে সম্প্রসারণ করে পৃথকভাবে নির্বাচন করবে, নাকি জাতীয় ঐক্যফ্রণ্ট অথবা সরকার দলীয় ১৪ দল বা মহাজোটে যোগ দিয়ে বিকল্পধারা নির্বাচনে যাবে? এ প্রশ্নে বি. চৌধুরী বলেন, আমি যুক্তফ্রন্টকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করব। যত বেশিসংখ্যক আসনে সম্ভব আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষিত নির্দলীয় সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনসহ ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য সম্পর্কে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমরা আগেই বলেছি, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের প্রথম দাবি। সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে।
নির্বাচন হওয়া নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বি. চৌধুরী বলেন, কিছু শঙ্কা সবার মনেই আছে।
সূত্রঃ সমকাল