অনলাইন ডেস্কঃ
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র ও চেয়ারম্যানদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারি দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমকালকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ীরা সুনির্দিষ্ট একটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এমপি পদে মনোনয়ন পেলে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। তখন তাদের আগের পদটি শূন্য হয়ে যাবে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে বাড়তি ঝামেলা তৈরি করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। আবার তিনি এটাও বলেছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে ভিন্ন চিন্তা নেওয়া যেতে পারে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের কেউ এমপি পদে যোগ্য হলে তার বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবে নেওয়া হবে। সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আওতায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকেন সিটি করপোরেশনের মেয়র, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পুরুষ এবং মহিলা সদস্য। বর্তমানে এই কাঠামোগুলোতে সংশ্নিষ্ট পদে নির্বাচিত ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের মেয়ররা আওয়ামী লীগের সমর্থক। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেশিরভাগও আওয়ামী লীগ ঘরানার। এর মধ্যে ৪৮ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ৩৩৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৩৩০ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ), ৩২৬ জন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) এবং ২১৬ জন পৌরসভা মেয়র রয়েছেন।
এ জনপ্রতিনিধিদের কেউ দলের মনোনয়নপত্র নিতে চাইলে তাকে আগেই পদত্যাগ করতে হবে না। তবে মনোনয়ন পেলে পদত্যাগ করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে হবে। সেই ক্ষেত্রে ওই প্রার্থীর ছেড়ে আসা শূন্য পদে উপনির্বাচন করাটা বাধ্যতামূলক হবে। এতে নতুন করে সংকট তৈরি হবে। পদত্যাগী জনপ্রতিনিধিরা তাদের শূন্য পদে নিকটাত্মীয় কিংবা নিজ বলয়ের নেতাদের জন্য দলের মনোনয়ন আদায়ের চেষ্টা চালাবেন। এ নিয়ে নতুন করে কোন্দল সৃষ্টিরও আশঙ্কা তৈরি হবে।
এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের দলের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়নকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করছেন। তাদের বিবেচনায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দলের স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে তাদের বড় ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া নিরুৎসাহিত করা হলে গৃহদাহ অনেকাংশেই কমে আসবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা আগামী ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করবেন। এরপরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার প্রস্তুতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য সমকালকে জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধরনের শর্ত দেওয়া হবে না। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু শর্তের কথা প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের নিরুৎসাহিত করা হবে।
তবে জেলা পরিষদ, উপজেলা ও পৌরসভার মেয়র এবং চেয়ারম্যানদের মধ্যে যারা যোগ্যতার পাশাপাশি জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন, তাদের ব্যাপারে ভিন্ন চিন্তা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন। তবে মনোনয়ন-সংক্রান্ত জরিপে ওই মেয়র এবং চেয়ারম্যানদের নাম জনপ্রিয় প্রার্থীদের তালিকার শীর্ষে থাকতে হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের এমপি পদে দলের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টি গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। নীতিনির্ধারক নেতারাও এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ সমকালকে জানান, এ রকম একটি বিষয় তিনিও শুনেছেন। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। আলোচনাও হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ মনে করেন, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে জনপ্রিয়দের এমপি পদে দলের মনোনয়নের জন্য বিবেচনায় আনা উচিত।
যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের এমপি পদে দলের মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টি তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের কাছ থেকে শুনেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তাকে একই তথ্য দিয়েছেন। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার আরও জানান, এটা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নয়। তবে কৌশল কি-না সেটা তার জানা নেই। দলের গঠনতন্ত্রের কোথাও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ীদের এমপি পদে মনোনয়ন না দেওয়ার কথা বলা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই মেনে নেওয়া হবে।
সূত্রঃ সমকাল