অনলাইন ডেস্কঃ
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ ২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দক্ষিণাঞ্চল ঘিরে তার উন্নয়নের মহা-পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন।
২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আগেই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, “ওই সময়ে বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ রোগে ধুকে মরবে না। তারা চিকিৎসা পাবে। প্রতিটি ছেলে মেয়ে স্কুলে যাবে, লেখা পড়া শিখবে এবং উচ্চ শিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে।”
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নির্মিত পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘স্বপ্নের ঠিকানা’র দলিল ও চাবি হস্তান্তর উপলক্ষে শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই অঞ্চলকে ঘিরে আমাদের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এখানে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আামাদের লক্ষ্য।”
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও এ অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা আরেকটি দ্বীপ খুঁজছি। অ্যাটমিক এনার্জির লোকরা সেখানে দেখছে। আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডিও করছি। এখানে আমরা আরেকটি পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলব। সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।”
দেশের সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগনোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সমুদ্র সীমা আমরা কাজে লাগাব। ব্লু ইকোনমি পরিকল্পনা আমরা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছি। এই সমুদ্র সম্পদ যাতে আমাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগে তার ব্যবস্থা আমরা নেব।”
স্বপ্নের ঠিকানার উদ্বোধন করে প্রধামন্ত্রী বলেন, “এই এলাকায় ১৩০টি পরিবারের জন্য আমরা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। এই পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ তো দিয়েছিই, ঘরও তৈরি করেছি, যাতে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পারে।”
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের দেশকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”
এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী সরকারি কলেজে নির্মিত পাঁচতলা ছাত্রীনিবাস ও নবনির্মিত একাডেমিক কাম এক্সামিনেশন হল, হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার কলেজে নবনির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন, ইসহাক মডেল ডিগ্রি কলেজে বনির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন, কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজে নবনির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল কলেজে নবনির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন, আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজে নির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন, মির্জাগঞ্জ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ৫ তলা বিজ্ঞান ভবন, মির্জাগঞ্জ শ্রীমন্ত নদীর উপর ৯৬ মিটার. দীর্ঘ সেতু, কলাপাড়ায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বরগুনা হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, বামনা ও বেতাগী উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বরগুনা জেলা গণগ্রন্থাগার, বরগুনা জেলা পুলিশ লাইনে মহিলা ব্যারাক, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ, বরগুনা সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, বরগুনা সদর-পাথরঘাটা-আমতলীতে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, তালতলী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনসহ মোট ২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, “আমি চাই এ প্রকল্পগুলো যেন যথাযথভাবে চলে। এর ব্যবহারও যেন সুন্দরভাবে হয়।”
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের ঠিকানার ঘরগুলো ঘুরে দেখেন এবং সেখানে একটি নারকেল গাছের চারা রোপন করেন। এর আগে তিনি প্রাঙ্গণের একটি পুকুরে মাছের পোনা ছাড়েন। প্রধানমন্ত্রী পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা এবং বয়লার টাওয়ারও পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, “আমরা এই এলাকায় এলএনজি টার্মিনাল করে দেব, যাতে শিল্পখাতসহ অন্যান্য খাতে এলএনজি ব্যবহার করা যায়। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ আমরা নেব।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ