ক্রীড়া ডেস্কঃ
ফিল্ডিং সেশনে শুরু দিনের অনুশীলন। সেন্টার উইকেটের ঠিক পেছনে স্লিপ কর্ডন সাজালেন কোচ স্টিভ রোডস। প্রথম স্লিপ মোহাম্মদ মিঠুন, দ্বিতীয় স্লিপ লিটন দাস, তৃতীয় স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে কৌতুহল জাগানিয়া বিষয় হলো, কিপার সেখানে মুশফিকুর রহিম। আলাদা এই সেশন শেষে সেন্টার উইকেটে বোলারদের অনুশীলনেও উইেকটের পেছনে মুশফিক। মঙ্গলবার সকালে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের অনুশীলন সেশনের খণ্ড চিত্রগুলো যা ফুটিয়ে তুলছে, টেস্টেও দেখা যাবে সেই ছবি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে কিপিং গ্লাভস ফিরে পাচ্ছেন মুশফিক।
দীর্ঘ সময় কিপিং অনুশীলন করে যখন ড্রেসিং রুমে ফিরছেন মুশফিক, প্রসঙ্গটি তুলতেই মুখে হাসি, “দল বলেছিল বলে কিপিং ছেড়েছিলাম, এখন দলই বলেছে কিপিং করতে। দেখা যাক…।”
অনেক দিন থেকেই দেশের ক্রিকেটের আলোচিত ইস্যু টেস্টে মুশফিকের কিপিং। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও মিডল অর্ডারের বড় ভরসা তিনি, দল তার কাছে চায় বড় ইনিংস। লম্বা সময় কিপিং করে ব্যাটিংয়ে লম্বা ইনিংস খেলা কঠিন। ব্যাটিং ও কিপিংয়ের ফাঁকে বিশ্রামটুকুর জন্যই টেস্টে তাকে ব্যাট করতে হচ্ছিল ৬ নম্বরে। তাতে তার ব্যাটিং সামর্থ্যের সেরাটা তিনি নিজে ও দল পাচ্ছে কিনা, এটি ছিল সবসময়ের প্রশ্ন। তবে মুশফিক বরাবরই জানিয়েছেন, কিপিং তিনি চালিয়ে যেতে চান, একসঙ্গে দুটি ভার বইতে আপত্তি নেই। অবশেষে গত বছর তাকে কিপিংয়ের ভার থেকে মুক্তি দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্তটি নেয় দল।
সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে এই সিরিজের আগ পর্যন্ত ৬ টেস্টে মুশফিক খেলেছেন কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেকনিক্যাল কারণে ৬ নম্বরে খেলা ছাড়া অন্য টেস্টগুলোয় ব্যাট করেছেন চার নম্বরে।
টেস্টে কিপিং ছাড়ার পর নতুন উচ্চতায় উঠেছিল কুমার সাঙ্গাকারা ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটিং ক্যারিয়ার। এ রকম উদাহরণ আছে আরও। মুশফিকের ক্ষেত্রেও ভাবনাটি ছিল এমনিই। বিস্ময়করভাবে হয়েছে উল্টো। কিপিং ভার কমানোর পর কমে গেল তার ব্যাটের ধার! কিপিং না করা এই টানা এই ৬ টেস্টের ১২ ইনিংসে ব্যাটসম্যান মুশফিককে পাওয়াই যায়নি সেভাবে। ফিফটি মোটে একটি!
টেস্ট ক্যারিয়ারের সামগ্রিক চিত্রও একইরকম অদ্ভুত। কিপিং করা টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ৩৬.৬০, কিপিংয়ের চাপমুক্ত থেকে ব্যাটিং গড় ২৪.৪৭।
টেস্টে কিপিং করা নিয়েই সপ্তাহ দুয়েক আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুশফিক বলেছিলেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করি, কিপিংটা আমার ব্যাটিংয়ে অনেক সাহায্য করে। পেছন থেকে যখন আমি দেখি, তখন তা আমার অধিনায়কত্ব ও ব্যাটিংয়ে অনেক সহায়তা করে। সব ব্যাটসম্যানেরই একটা প্রস্তুতি থাকে না? নক করা বা এমন কিছু, আমার প্রস্তুতিতে কিপিংটা বড় অংশ।”
মঙ্গলবারও তার কণ্ঠে শোনা গেল অনেকটা একই রকমের কথা। কিপিং না করা টেস্টে যেখানে ব্যাটিং ভালো হওয়ার কথা, সেটি উল্টো হওয়ার কারণ কিছুটা আন্দাজ করা যায় মুশফিকের ভাবনা থেকেই।
“আমার কোনোটাতেই আপত্তি নেই। তবে আমার ভালোর জন্য কিপিং ছাড়ার কথা বলেছেন অনেকে। কিন্তু আমি নিজে তো জানি, কোনটায় আমার আত্মবিশ্বাস বেশি থাকে!”
দীর্ঘমেয়াদে কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে গেলে রেকর্ড বদলাতো কিনা, সেই প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে আপাতত সেটি দেখা হচ্ছে না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্ট দিয়ে কিপিংয়ে ফেরা মোটামুটি নিশ্চিত।
সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কিপার হিসেবে খেলা নুরুল হাসান সোহান এবার স্কোয়াডে নেই। তার আগের চার টেস্টে কিপিং করেন লিটন দাস। তখন তিনি ব্যাট করেছে মিডল অর্ডারে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ থেকে ওপেন করছের লিটন। জিম্বাবুয়েও বিপক্ষেও ইমরুল কায়েসের উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী তিনি। কিপিং করার সম্ভাবনা তাই নেই। স্কোয়াডে থাকা মোহাম্মদ মিঠুনও কিপার। তবে তার একাদশে জায়গা পাওয়াই নিশ্চিত নয়।
তবে মুশফিকের চাওয়া বা কিপিং না করে তার বিবর্ণ পারফরম্যান্স নয়, তাকে কিপিংয়ে ফেরানোর বড় কারণ সাকিব আল হাসানের না থাকা। দলের সঙ্গে সিলেটে আসা নির্বাচক হাবিবুল বাশার বললেন টিম কম্বিনেশনের কথাই।
“সাকিব না থাকা মানে একই সঙ্গে একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান ও স্পেশালিস্ট বোলার হারানো। একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান কিংবা বাড়তি বোলার, একাদশে দল যেটিরই প্রয়োজন মনে করুক, সেই বিকল্প রাখতেই মুশফিককে কিপিংয়ে ফেরানোর ভাবনা। দল নির্বাচনে সেটিই ছিল আলোচনায়।”
পারিপার্শ্বিক সব কিছু মিলিয়েই তাই প্রিয় কিপিং গ্লাভস ফিরে পাচ্ছেন মুশফিক। দল অপেক্ষায় টেস্টে তার ব্যাটিং ধারাবাহিকতা ফিরে পাওয়ারও।
সূত্রঃ বিডিনিউজ