রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আবু মো: ইসমাঈল নোমান। তিনি গর্জনিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের রামু ডটকমের মুখোমুখি হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান এবং হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রথমবারের মত এলাকার জনপ্রতিনিধি হওয়ার নির্বাচনে শামিল হয়েছেন। ঠিক কি কারণে আপনি কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হতে চান?
আমার শখ মানুষের সেবা করা। তাই আমি চেয়ারম্যান হতে চাই। আমার এলাকার গরিব মেহনতি মানুষ অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় আছেন। তাদের সেবা করে কোনরকম একটু দারিদ্র বিমোচন করে একটু মাথা উঁচু করে দাঁড়া করানোর স্বপ্ন দেখি আমি। এই স্বপ্ন পূরণের জন্যই আমি নির্বাচন করছি।
বিএনপির পক্ষে আরো অনেকে কচ্ছপিয়া থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাদের সাথে আপনার পার্থক্য কোথায়?
স্থানীয় বিএনপির সভাপতি কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে নির্বাচনে আসেন নাই। বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের প্রাক্তন সংসদ সদস্য কাজল মনে করেছেন একজন তরুণ ও জনপ্রিয় লোককে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে ধানের শীষকে জয়ী করে আনা যাবে। এজন্যই আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আপনি নিজে অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশী থেকে নিজেকে কতটুকু আলাদা মনে করেন?
অন্য সবার চেয়ে একটি জায়গায় আমি এগিয়ে আছি, তা হচ্ছে গণমানুষের সাথে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে আমার সম্পর্ক। অন্য আগ্রহী প্রার্থীরা এলাকায় থাকেন না এবং তাঁদের সাথে গণমানুষের সম্পর্ক কম।
এখন পর্যন্ত এলাকাবাসীর জন্য আপনি কি কি কাজ করেছেন?
আমি মসজিদ করেছি, মাদ্রাসা করেছি, স্কুল করেছি। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ, টুল ইত্যাদি দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে আসছি।
এসবের বাইরে এলাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে আপনি কিভাবে জড়িত ছিলেন?
আমি বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত। আমি গর্জনিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আমি এলাকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম। তাদেরকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেছি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। এছাড়া, আমি এলজিইডির পানিসম্পদ বিষয়ক একটি প্রকল্পের সভাপতি। সেই সমিতির সদস্য ১,২০০ জন। এই প্রকল্পের আওতায় সঠিক পানি সেঁচের মাধ্যমে সহজভাবে কৃষিকাজ করার জন্য কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ছাত্রজীবনে আপনি ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিলেন। এবার বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আগে রাজনৈতিক দল বা তার অঙ্গসংগঠনের সাথে আপনার আর কোন সম্পৃক্ততা ছিল?
শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে এই সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম। পরবর্তীতে আমি বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত হই।
আমার চাচা ১৯ বছর ধরে এই এলাকা থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন। আমি তাঁর পক্ষে কাজ করেছি। আমি ১৯৯৬ সাল থেকে বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজল সাহেবের সাথে কাজ করছি এবং বিভিন্নভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর পক্ষে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ করে আসছি।
কচ্ছপিয়ার বাইরের পাঠকদের জন্য কচ্ছপিয়া এলাকার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিন।
কক্সবাজারের সবচেয়ে পূর্ব প্রান্তের মায়ানমার সীমান্তে একটি আলোচিত বাজারের নাম গর্জনিয়া বাজার। কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে এর অবস্থান। এই বাজারে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন এমনকি মায়ানমার থেকে লোক আসে। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বিভিন্ন লোকের সমাগম হয়।
শুধু বাজার দিয়েই পরিচিতি করাবেন? আর কিছু, যেমন এখানকার লোকদের সম্পর্কে বা অন্য কোন বিষয়ে কিছু বলার নাই?
আমাদের এলাকার লোকেরা অত্যন্ত সহজ-সরল এবং ধর্মপ্রাণ। ইসলামকে লালন করে, ধারণ করে এবং জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। এলাকার লোকজন কৃষিকাজ এবং কাঠের উপর নির্ভরশীল।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা কত? তারা কোন শ্রেণী, আর্থিক অবস্থা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার?
আমার এলাকার লোকসংখ্যা ৫০ হাজারের উপরে। এর মধ্যে ভোটার সাড়ে ১২ হাজারের মত। এদের বেশির ভাগ অতি দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক। উচ্চবিত্ত লোক এখানে নাই বললেই চলে। কৃষিজীবীর পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষও এখানে কিছু আছেন। পাঁচ থেকে দশ ভাগ লোক ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া পাঁচ শতাংশ লোক চাকরিজীবী। রাজনীতিবিদের সংখ্যা এক থেকে দুই ভাগ মাত্র।
পুরো এলাকার শিক্ষাগত পরিস্থিতি কিরকম?
আমাদের এলাকার শিক্ষার মান খুবই নিম্ন। অক্ষরজ্ঞানের কথা বললে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লোকের তা আছে। আর এসএসসি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত থাকবেন মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষ।
দুর্বল অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত অবস্থার উন্নয়নের জন্য আপনার সুনির্দিষ্ট কি কি পরিকল্পনা আছে?
শিক্ষানুরাগী সদস্য হিসেবে আমি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। যেমন, বিভিন্ন স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসা করেছি। এছাড়া বাজার সমিতির মাধ্যমে আমি প্রতি বছরই বিভিন্ন বৃত্তি দিয়ে থাকি। নির্বাচিত হলে আমি এলাকায় একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলব। এটা আমার স্বপ্ন। এলাকার লোকজন ধর্মপ্রাণ, তাই একটি বালিকা মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করব।
নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে অন্য কোন কোন বিষয়কে আপনি অগ্রাধিকার দিবেন?
নির্বাচিত হলে আমি শিক্ষা খাতের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিব। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থায়, যেমন রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট করায় গুরুত্ব দিব।
অনুগ্রহ করে একটু সুনির্দিষ্ট করে বলবেন।
দেশের অভাব অসীম। এখানে বড় ধরনের কাজ করার মত কোন সুযোগ নাই। তারপরও আমি বলব, গ্রামগঞ্জের যে কাঁচা রাস্তাগুলি দিয়ে বাজারে আসতে লোকজনের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সেগুলো আমি অতি সহসাই ঠিক করব। এছাড়া বাজারের যানজট, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নাই, আমি বিদ্যুৎ আনায় অগ্রাধিকার দিব।
দেশের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেলেও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে একমাত্র গর্জনিয়া বাজার ছাড়া আর কোথাও এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ যায় নাই। বিদ্যুৎ আনার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন পদক্ষেপ আপনি নিবেন?
বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়ন্ত্রকদের সাথে কথা বলে বিদ্যুৎ নিয়ে আসব। এটা অসম্ভব কিছু না। চেয়ারম্যান বা মেম্বার না হয়েও আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছি, এবং সরকারের অনেক উন্নয়নের কাজে জড়িত ছিলাম। বিদ্যুৎ আনাও সম্ভব। শুধু জায়গাটা চেনা থাকলে আর সেই মানসিকতা থাকলেই এটা করা সম্ভব।
এই মানসিকতা বা উদ্যোগ কি আগের জনপ্রতিনিধিদের ছিল না?
অনেককিছু আসলে যোগ্যতার উপর নির্ভর করে। একজন অশিক্ষিত লোক যদি সমাজের নেতৃত্বে আসে তাহলে সে আর কি চিনবে? বলা হচ্ছে, শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। মেরুদ-হীন হলে সে আর কতটুকু করবে? যা হোক, নির্বাচিত হলে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এখানে বিদ্যুৎ নিয়ে আসার জন্য আমি চেষ্টা করব।
শিক্ষা, বিদ্যুৎ আর রাস্তাঘাটের বাইরে আর কোন সমস্যাকে আপনি এলাকার বড় সমস্যা বলে মনে করেন?
এসবের বাইরে চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা এখানকার বড় সমস্যা। নির্বাচিত হলে আমি এখানে একটি হাসপাতাল করার চেষ্টা করব।
নদীভাঙ্গনের কারণে মানুষের দুর্ভোগ কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের প্রতিবছরের ঘটনা। বিষয়টি আপনার কাছে তাহলে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়?
এটাও গুরুত্বপূর্ণ। নদীর পাশে রাস্তা যখন করব তখন নদীভাঙ্গন কমে যাবে। এখন রাস্তা না থাকায় পাহাড়ি ঢল এসে নদীভাঙ্গনের সৃষ্টি করে।
আরেকটি সমস্যা মানবপাচার। গত বছরখানেকে এই ঘটনা কমে এলেও তার আগে কচ্ছপিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর লোক মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছেন। এই এলাকাতে কিছু পাচারকারীর সন্ধানও পাওয়া যায়। সেই প্রবণতা রোধে আপনি কি পদক্ষেপ নিবেন?
এলাকার দারিদ্রের কারণেই কিছু লোক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। তবে আমার মনে হয় না কোন পেশাদার মানবপাচারকারী আমার এলাকায় আছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: ১৮ মে ২০১৬
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হল।অপর জন নুরুল আমীন কোম্পানী সময় দিতে না পারায় বার বার যোগাযোগ করেও তাঁর সাক্ষাৎকার নেয়া যায়নি।