হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
স্টাফ রিপোর্টার, আমাদের রামু ডটকম:
ইউনিয়ন পরিষদের ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে আজ শনিবার ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলার ৭১০ ইউপির সঙ্গে ভোট গ্রহণ চলবে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার সদর, রামু ও উখিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে। এদিকে সহিংসতা-অনিয়ম নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি আগের পাঁচ ধাপের চেয়ে এবার ‘ভালো করে’ তৃণমূলের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ভোটের লড়াই শেষ করতে চাইছে। তবে সহিংসতা-অনিয়ম অব্যাহত থাকায় শেষ ধাপের ভোট নিয়ে শঙ্কা কাটেনি সংশ্লিষ্টদের। ইউপিতে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে। অনিয়ম-সহিংসতা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। ক্ষমতাসীনরা সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে দাবি করলেও বিএনপি বলছে ‘তামাশার ভোট’ হচ্ছে। সহিংসতায় হতাশ নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আশায় আছেন, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’- এমন উপলব্ধি থেকে শেষটায় ‘আলাদা উদ্যোগ’ নেবে ইসি।
অন্যদিকে নতুন কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও শেষ ধাপের নির্বাচনে ‘কঠোর অবস্থান নেওয়ার’ কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভোট উৎসবে কক্সবাজারে মাঠে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। গ্রামগঞ্জের এ নির্বাচনে লড়াই হচ্ছে মূলত প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যেই। শেষ ধাপের উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে কক্সবাজারে যেমন রয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা, তেমন আশা-আশঙ্কাও রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে জেলার কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, পোকখালী, ঈদগাঁও, জালালাবাদ ও চৌফলদন্ডী, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, খুনিয়া পালং, চাকমারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও জোয়ারিয়ানালা, উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং, রাজাপালং, রত্নাপালং, ও পালংখালী সহ সর্বমোট ১৭ ইউপিতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন শেষ করতে যাবতিয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। নির্বাচনী সরঞ্জাম, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা গতকাল থেকে কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
কক্সবাজার সদর :
উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে লড়ছে ৪০৩ প্রার্থী। তৎমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫১জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৮০জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৭৪জন। এসব ইউনিয়নে আজ ভোট কেন্দ্র পাহারায় থাকবে সহস্রাধিক জনগণ। জালালাবাদ সর্বদলীয় ভোটাধিকার রক্ষা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেন। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সদর উপজেলায় ৮১ হাজার ৪৬জন ভোটার নিজেদের মূল্যবান রায় প্রধান করবেন। তিনি জানান-সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতেও থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা।
রামু :
উপজেলার ফতেখাঁরকুল সদর, রাজারকুল, চাকমারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, খুনিয়া পালং ও জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৫৯ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২১২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ইতোমধ্যে এসব প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে নানান প্রতিশ্রুতি ও প্রচার প্রচারণা শেষ করেছেন।
এদিকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে যাবতীয় প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সেলিনা কাজী আমাদের রামু ডটকমকে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহন সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কোন অবস্থাতেই ব্যালেট বাক্স ছিনতাই, জালভোট প্রয়োগ, ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের প্রস্ততি রয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য রামু উপজেলার ছয় ইউনিয়নের শেষ ধাপের নির্বাচনে ভ্রাম্যমান ম্যজিস্ট্রেট সহ ৪ স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে নিয়োজিত থাকবেন।
রামু উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বেদারুল আলম আমাদের রামু ডটকমকে জানান, ছয়টি ইউনিয়নের ৫৪টি ভোট কেন্দ্রে আজ ভোট গ্রহণ চলবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণনের জন্য ৫৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ২৬৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ৫৩২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফতেখাঁরকুল সদর ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৯৪৪ জন, জোয়ারিয়ানালায় ১৬ হাজার ৪৫৮ জন, রাজারকুলে ১১ হাজার ৭৩০ জন, দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ১৪ হাজার ১১৯জন, খুনিয়া পালংয়ে ১৯ হাজার ৯০৮ জন, চাকমারকুলে ৯ হাজার ৭২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
রামু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর আমাদের রামু ডটকমকে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে। আজ পুলিশের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে।
রামুতে ১২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ :
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রার্থীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফতেখাঁরকুল সদর ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার ৯ শত ৪৪ জন। তার মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ ও উপজাতী সম্প্রদায়ের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। এসব ভোটারগণ ভোটের দিন সংঘর্ষের আশংকায় ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে বলে অনেক প্রার্থী মনে করেন। সূত্রে আরো জানা যায়, ২৮ মে সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নে ভোট পরবর্তী সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় একই আতঙ্ক ফতেখাঁরকুল ও চাকমারকুল ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যেও কাজ করছে।
ফতেঁখারকুল ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে প্রার্থীরা ৫টি কেন্দ্রকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবী করেছেন। এই ৫টি কেন্দ্রের মধ্যে উত্তর ফতেখাঁকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, পশ্চিম মেরংলোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, রামু খিজারী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র, মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ফজল আম্বিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানা যায়।
এদিকে চাকমারকুল ইউনিয়নের একাধিক কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেন দু’একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। তারা জারাইলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহমদের পাড়া ৮নং ওয়ার্ড কেন্দ্র, পশ্চিম চাকমারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯নং ওয়ার্ড কেন্দ্রকে নিয়ে অভিযোগ করেছেন।
উখিয়া :
উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ৪৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করার জন্য ৪৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার সহ ১ হাজার ৩ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োজিত থাকবেন। এবার উপজেলার ৫ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ২২৮ জন ও সংরক্ষিত নারী আসনে ৬৫ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে মাঠে আছেন।
উখিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি, তদন্ত) মোহাম্মদ কায় কিসলু আমাদের রামু ডটকমকে জানিয়েছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে ২৫০ জন পুলিশ, ১৬ জন র্যাব, ৫ প্লাটন বিজিবি ও প্রতিটি কেন্দ্রে ১৩ জন করে আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব ইউনিয়নে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬ জন নারী পুরুষ ভোটার রয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার নুরুল ইসলাম আমাদের রামু ডটকমকে বলেন, ৪৯ টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪ টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র গুলো হলো-রাজাপালং মাদ্রাসা, হরিণমারা, তুতুরবিল, খয়রাতি পাড়া, উত্তর পুকুরিয়, পালংখালী ইউনিয়নের ফারিরবিল মাদ্রাসা কেন্দ্র, বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রূমখাঁ মাদ্রাসা, মহাজন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, রতœাপালং ইউনিয়নে আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রত্নাপালং উচ্চ বিদ্যালয়। জালিয়াপালং ইউনিয়নের পন্যাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছেপটখালী ও মনখালী কেন্দ্র।