অনলাইন ডেস্কঃ
ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ব্যাংককের হাসপাতালে কয়েক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে তার।
দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও।
সৈয়দ আশরাফের ব্যক্তিগত সহকারী এ কে এম সাজ্জাদ আলম শাহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মরদেহ দেশে আসবে।
সৈয়দ আশরাফের জানাজা ও দাফনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত রাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসনমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
৬৮ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
হাসপাতালে থেকেই তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি সৈয়দ আশরাফ। পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছিলেন, শপথের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছেন নবনির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।
তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। এই খবর পেয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরীও সঙ্গে সঙ্গে শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন।
নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা স্বয়ং আশরাফের জন্য ভোট চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে।
তিনি জেলার নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, “যেহেতু এখানে সৈয়দ আশরাফ সাহেব অসুস্থ, সবাই মিলে তার জন্য কাজ করে যাবেন, যেন তিনি নির্বাচনে জয়ী হন। সুস্থ হয়ে তিনি যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসেন এই দোয়া করছি।”
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের হাল ধরেন। ওই বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে পরে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন তিনি।
দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালের কাউন্সিলে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে নিয়ে যান শেখ হাসিনা।
২০০৯ সাল থেকে নানা ঘটনা এবং ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্যে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পাশাপাশি আশরাফের ভূমিকার কথা গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করেন দলটির কর্মীরা।
২০১৬ সালের কাউন্সিলের আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দেওয়ার পর নানা গুঞ্জন ছড়ালেও কাউন্সিলে শেখ হাসিনার সঙ্গে আশরাফের ছবি তা নাকচ করে দিয়েছিল।
২০১৭ সালে স্ত্রী শীলা আহমেদের মৃত্যুর পর থেকে নিজেও অসুস্থ ছিলেন আশরাফ। একমাত্র মেয়ের সঙ্গে লন্ডনেই বেশি সময় কাটাতেন। মন্ত্রিসভার কাজেও অনিয়মিত ছিলেন তিনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদ থেকেও ৯০ দিনের জন্য তিনি ছুটি নিয়েছিলেন।
ব্যাংককের হাসপাতালে থেকেই করা ওই আবেদনে আশরাফ বলেছিলেন, তিনি ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ইউনিটে’ ভর্তি রয়েছেন। তার চিকিৎসায় আরও অনেকদিন সময় লাগবে।
তার চার মাসের মধ্যে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই রাজনীতিক।
সাবেক রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলের ছেলে আশরাফের রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রলীগের মাধ্যমে, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাতক ছিলেন তিনি, ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও।
১৯৭৫ সালের অগাস্ট ট্র্যাজেডির পর নভেম্বরে কারাগারে সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর বিরূপ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন আশরাফ। লন্ডনে নির্বাসিত জীবনে প্রবাসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন সৈয়দ নজরুলের বড় ছেলে।
দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আশরাফ। এরপর ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হন।
এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সময় আশরাফের আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত তার উপরই আস্থা রাখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
এবার নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।