নিজস্ব প্রতিনিধি:
সত্য টিকে থাকবেই এবং কোনও না কোনও সময় তা প্রকাশিত হবেই। এ কথা আবারও প্রমানিত হলো কক্সবাজারের রামুর গর্জনিয়ায়। ইউনিয়নে যুবলীগনেতা হত্যা ও চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় অবশেষে মামলা হওয়ায় সচেতন মহল এমনটাই মনে করছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গেল ২৮মে নির্বাচনের আগের রাতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তার লোকজন আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। হামলাকারীরা যাওয়ার পথে নৌকার সমর্থক মঞ্জুরুল আলমকে গণপিটুনি দেন।
এতে তিনি মাথা সহ গুরুতর আহত হন। এসময় পালাতে গিয়ে হামলাকারীদের কয়েকজনও গ্রামবাসিদের প্রতিরোধে আহত হন।
এর পর গুরুত্বর আহত মঞ্জরুলকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসাপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৮ মে তাকে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়। এক দিনের ব্যবধানে লাশ হয়ে ফিরেন মঞ্জুরুল। কিন্তু এ ঘটনায় রহস্যজনক কারণে মামলা নিচ্ছিলনা রামু থানা পুলিশ।
মঞ্জুরুলের শাশুড় ও স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সদস্য আবু শাহমা বলেন, এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল সাবেক শিবির ক্যাডার নজরুল। আমাদেরকে অর্থের লোভে ফেলতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাঁর মিশন ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার কামনা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বামীকে অকালে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সলিমা খাতুন এ বিষয়ে আইনি প্রতিকার চাইতে বার বার ছুটে গেছেন রামু থানায়। কিন্তু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর নানা অপারগতা দেখিয়ে মামলা নেয়নি। অবশেষে সলিমা খাতুন বাদী হয়ে গত ৫মে ‘সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১ কক্সবাজারে’ সাবেক শিবির ক্যাডার সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এক নম্বর, মোজাফ্ফর আহমদকে দুই নম্বর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের সাবেক শিবির ক্যাডার মাজেদ সিকদারকে তিন নম্বর আসামি করে ২০ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দরখাস্ত দেন।
এ দরখাস্তে ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়েছে। সলিমা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের নির্দেশে ৯ জুন রামু থানা পুলিশ হত্যা মামলাটি আমলে নেয়।
এদিকে চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরীর বাড়িতে হামলার ঘটনায়ও একই কায়দায় একই দিনে মামলা হয়েছে। এখানে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ২০ জনকে। ১৫০/২৫০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, আমি গর্জনিয়া ইউনিয়নের পাঁচ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। নজরুল ইসলাম শিবিরের ও পরে জামায়াতের দুর্ধর্ষ ক্যাডার ছিল। এবারের ইউপি নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে সম্মানিত করেছেন। সেই সুবাদে জামায়াত-বিএনপির এলাকা হিসেবে পরিচিত গর্জনিয়ার প্রতিটি এলাকায় নৌকার স্লোগান হয়েছে। যা মেনে নিতে পারেনি নজরুল। তাই নৌকা তথা শেখ হাসিনাকে হারাতে নির্বাচনের আগের রাতে শিবির ও জামায়াত নেতা সহ সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে নানা ধরণের অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা ও ডাকাতি হয় তাঁর উপস্থিতিতে। এ হামলা থেকে রক্ষা পায়নি আমার স্ত্রীও। নজরুল ও আরেক শিবির ক্যাডার মাজেদ আমার স্ত্রীর হাত ভেঙে দিয়েছে। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এ ব্যাপারে ন্যায় বিচার কামনা করছি সকলের কাছে।
জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জান মুঠোফোনে বলেন, যুবলীগনেতা হত্যা ও চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরীর বাড়িতে হামলা এবং ডাকাতির ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত আসামীদের অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে জানান তিনি।