দেশে ধারাবাহিক গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে জনগণকে হাতে লাঠি নিয়ে ‘প্রতিরোধ বাহিনী’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
শুক্রবার বিকালে শাহবাগে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “৬৮ হাজার গ্রামে লাঠি হাতে নিয়ে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলুন। সেটা করতে পারলে আমরা এই অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।”
জনগণকে লাঠি হাতে নেওয়ার আহ্বানের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমরা সরকারের কার্যক্রমে ১৬ আনা ভরসা করতে পারছি না।
“কয়েকটি ঘটনা ঘটার পর কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কোন দেশে এসব না হয়? আজকে তাকেই স্বীকার করতে হচ্ছে, এখানে জেএমবি আছে, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম আছে।
“কিন্তু আরেকটা নতুন প্রশ্নও তিনি উত্থাপন করেছেন- এটা হোম মেইড সন্ত্রাসী, এটা বিদেশ থেকে আইএস দ্বারা পরিচালিত নয়। আমি তাকে বলতে চাই, বিদেশে তৈরি না হয়ে যদি দেশের মাটি থেকে তৈরি হয় সেটা কি কম বিপজ্জনক না বেশি? আমি তো মনে করি, সেটা আরও বেশি বিপজ্জনক।”
‘খুন-ধর্ষণ-জঙ্গিবাদবিরোধী গণআন্দোলন’র ব্যানারে শাহবাগে এই সমাবেশ হয়।
আওয়ামী লীগ সাত বছর ক্ষমতায় এলেও জঙ্গিবাদ নির্মূল না হওয়ার পিছনে এই সরকারের ‘সদিচ্ছার অভাবকে’ দায়ী করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি সেলিম।
তিনি বলেন, “সরকারের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মতো হিম্মত নিয়ে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি বাংলার স্বাধীনতা চাই।
“শেখ হাসিনাকে বলতে হবে, দরকার হলে আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব, কিন্তু এই জামায়াত ও জঙ্গিবাদকে বাংলার মাটিতে স্থান দেব না। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে রাস্তায় আসেন। আমরা এক সাথে লড়াই করে এ শক্তিকে মোকাবেলা করতে পারব।
“আর প্রধানমন্ত্রিত্ব রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক শক্তিকে খুশি রাখার জন্য আপনি জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গে তলে তলে লাইন করে বসে থাকবেন, সেটা দিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই অবস্থাতে অবধারিতভাবেই দাঁড়াবে।”
সমাবেশে বক্তব্যে কুমিল্লায় নিহত কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সমালোচনা করেন উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী।
তিনি বলেন, “একটি মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, এটাতো সত্যি। মেয়েটি নেই আর এই পৃথিবীতে এটাতো সত্যি।… ডাক্তার যে প্রতিবেদন দিয়েছে, কোন বিবেকের তাড়নায় দিয়েছে? টাকা খেয়ে? নাকি কোনো পোশাকের ভয় পেয়েছে? কারণটা কী?
“আজকে যদি পোশাকের ভয় আর টাকা খেয়ে দেশ চালাতে চান, তাহলে দেশতো ভাগাড়ে পরিণত হবে। সেই ভাগাড়েতো আমরা থাকতে চাই না।”
এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার তদন্ত নিয়েও ‘একটা খেলা চলেছে’ বলে মন্তব্য করেন কামাল লোহানী।
তিনি বলেন, “এরমধ্যে পরকীয়া ঢুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কী অদ্ভূত ব্যাপার! যে মানুষটি জঙ্গিদের ধরার জন্য কয়েকটি সফল অভিযান করে গেল, তার স্ত্রী এমনভাবে খুন হলেন- তাকে নিয়ে পর্যন্ত খেলা হচ্ছে। তার মানে পুলিশ কিন্তু তার নিজের লোককেও রক্ষা করতে পারছে না। কী অদ্ভূত কাণ্ড-কারখানা!”
“আপনারা পারছেন না কেন? বাধা কোথায়?,” পুলিশ সদস্যদের প্রতি প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ট্রাইব্যুনাল করে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপারসন মাহফুজা খানম।
প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে অব্যাহত খুন, ধর্ষণ ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আগামী ২৯ জুলাই শাহবাগে সমাবেশ এবং ২৭ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রাসহ কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন উদীচীর সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
এদিনের সমাবেশের ঘোষণাপত্রে অবিলম্বে জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত ও বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত, জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক ও অর্থায়নের উৎস খুঁজে বের করে ধ্বংস করা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, তনুসহ সব হত্যা ও ধর্ষণের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ ও গুম বন্ধসহ পাঁচটি দাবি জানানো হয়।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফি রতনের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি আসলাম খান, ক্ষেতমজুর সমিতি নেতা মোতালেব খান, কৃষক সমিতির জাহিদ হোসেন খান, প্রগতি লেখক সংঘের সংগঠক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকি আক্তার বক্তব্য দেন।
[বিডিনিউজ]