নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খাগড়াছড়ি জেলায় অবৈধভাবে চলছে অর্ধশতাধিক প্যাথলজি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। অভিযোগ রয়েছে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। রোগী এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়লেও এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই তাদের।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ও জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, নিয়মের তোয়াক্কা না করে খাগড়াছড়ি জেলার নয় উপজেলায় অর্ধশতাধিক প্যাথলজি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক চলছে অবৈধভাবে। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দু’একটি সেবার জন্য জেলা সিভিল সার্জন অফিস অনুমোদন দিলেও বেশিরভাগই সেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে অবৈধভাবে।
শর্তানুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল রাখার বিধান মানছে না কোনও প্রতিষ্ঠান। আর এসব অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান চালাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। তারা নানা অজুহাতে রোগীদের বাধ্য করে বেসরকারি এবং অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানে যেতে। এই নিয়ে রোগীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম শফি বলেন, খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নানা অনিয়ম চলছে। রোগীরা হাসপাতালে এলে চিকিৎসকেরা তাদের বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে বাধ্য করেন। রোগীদের আর্থিক অবস্থার বিষয়টি তারা বিবেচনায় নেন না।
তিনি আরও বলেন, গত ২২ জুন রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জিপ চালক রূপম দে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসক ও কর্মচারীরা তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে যেতে বাধ্য করেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ পরিবহন শ্রমিকেরা বেসরকারি ক্লিনিক ও সরকারি হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ও ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনার জন্য চিকিৎসক ও কর্মচারীরা সরাসরি দায়ী বলে অভিযোগ করেন তিনি।
দিঘীনালা উপজেলার নয়মাইল এলাকার বাসিন্দা রতন ত্রিপুরা বলেন, চিকিৎসকরা ঠিকমতো হাসপাতালে বসেন না। তাদেরকে হাসপাতালে পাওয়া যায় না। তারা ক্লিনিকে বসে থাকেন। হাসপাতালে টিকেট কেটে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রোগীরা বিরক্ত হয়ে যান।
মহালছড়ি উপজেলার সিঙ্গিনালা এলাকার মংসাপ্রু মারমা অভিযোগ করে বলেন, তিনি তার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে মা ও শিশু হাসপাতালে আসেন। কিন্তু ডাক্তার তাকে বাধ্য করেন চেড়ী কাঁশবন নামক ক্লিনিকে স্ত্রীকে ভর্তি করাতে। ডাক্তারকে বারবার আর্থিক দূরাবস্থার কথা বলা হলেও তিনি বিষয়টি আমলে নেননি। বেসরকারি ক্লিনিকের সঙ্গে ওই চিকিৎসকের যোগাযোগ আছে এবং তারা চিকিৎসার পরিবর্তে ব্যবসা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মাটিরাঙা উপজেলার বর্ণাল এলাকার মো. ইয়াছিন আলী বলেন, প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার দূর থেকে সরকারি হাসপাতালে এলেও রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে নানা অজুহাতে ক্লিনিকে পাঠানো হয়।
খাগড়াছড়ি মেডিক্যাল সেন্টার নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের পরিচালক মো. শাহজাহান চিকিৎসকদের ক্লিনিকে রোগী পাঠানোর কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, অনেক উন্নতমানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যেগুলো হাসপাতালে হয় না, সেগুলো পরীক্ষার জন্য তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ড. নিশিত নন্দী মজুমদার বলেন, হাসপাতাল জাতীয় সম্পদ। এখানে শ্রমিকদের হামলা প্রত্যাশিত নয়। চিকিৎসক বা স্টাফেরা কোনও রোগীকে জোর করে বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীদের পাঠানোর অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। আর যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই, সেগুলোর তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে।
[বাংলা ট্রিবিউন]