অনলাইন ডেস্কঃ
দ্রুতগতিতে বাইসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল এক কিশোর। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারী এক বৃদ্ধকে ধাক্কা দেয় ওই কিশোর। এতে বৃদ্ধ লোকটি আছড়ে গিয়ে পড়েন রাস্তার পাশের নর্দমায়। মারাত্মক আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েন সেখানেই।
এই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছিল আশপাশের লোকজন। কিন্তু সবার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি সকালে হাঁটতে বের হওয়া বিচারক সাঈদ শুভ। নর্দমায় নেমে একাই তুলে আনেন বৃদ্ধকে। এরপর নিজেই সেবা করেন বৃদ্ধের।
মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান গোরস্থান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সাঈদ শুভ রাজশাহী জেলা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ। তবে আহত এই বৃদ্ধের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনাকবলিত বৃদ্ধকে উদ্ধার করতে আশপাশের লোকজন এগিয়ে না আসায় খুবই ব্যথিত হয়েছেন বিচারক সাঈদ শুভ। ঘটনার সময় আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ‘কাণ্ডজ্ঞান’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই বিচারক।
বিচারক সাঈদ শুভ বলেন, অনেকদিন মানুষের প্রতি এতো বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হইনি। মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাসার সামনে এসেছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা কিশোরের আঁকাবাঁকা সাইকেল চালানোর কারণে এক বৃদ্ধ চাচা তার গতিমান সাইকেলসহ ড্রেনের মধ্যে পড়ে গেলেন। মাথা গিয়ে আঘাত করলো ড্রেনের ওয়ালে, বুক ও হাঁটুতেও সমানভাবে আঘাত পেয়েছেন বৃদ্ধ চাচা। ড্রেনের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েছেন তিনি।
আমি দৌড়ে গিয়ে বৃদ্ধ চাচাকে ওঠানোর চেষ্টা করছি। ড্রেনটা বেশ গভীর। চাচাকে উঠাতে হিমশিম খাচ্ছি। ড্রেনের পাশে বেশ কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়েছেন। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনে হয় ‘রিয়েলিটি শো’ দেখছেন আর মজা পাচ্ছেন। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একা একাই টেনে তুললাম বৃদ্ধ চাচাকে। খুবই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়েছি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা ৮-১০ জন মানুষের ওপর।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারক সাঈদ শুভ ফেসবুকে লিখেছেন, অনেক সময় না হয় ভয়াবহ বিপদ দেখেও মানুষের কিছু করার থাকে না, এ কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারে না। কিন্তু এখানে শুধু দুই হাত বাড়িয়ে মানুষটাকে ওঠানো যেত। এটুকুও করতে প্রস্তুত নয় এই মানুষগুলো? আসলে হৃদয়হীন মানুষ এই সমাজে অনেক বেড়ে গেছে। এই বিবেকহীন মানুষগুলোকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য অনেক জাস্টিফিকেশন খুঁজছি। কিন্তু একটা জাস্টিফিকেশনও খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের ক্ষমা করে দিতে পারলে ভালো লাগতো।