পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে তরকারী হিসেবে অবাধে বাঁশের করুল (বাঁশের চারা) ব্যবহারের ফলে জেলার মাটিরাঙ্গা এলাকায় বাঁশের গাছের বিস্তার ব্যাহত হচ্ছে। বাঁশের করুল পার্বত্য এলাকার অধিকাংশ উপজাতি জনগোষ্ঠীর কাছে অধিক প্রিয় এবং অন্যতম একটি খাদ্য। ইতিমধ্যে পাহাড়ীদের পাশাপাশি বাঙ্গালীদের কাছে খাদ্য হিসেবে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাঁশকরুল। এমন কোন বাজার নেই যেখানে বাঁশের করুল বিক্রি হচ্ছে না। অবাধে এর ব্যবহারের কারণে মাটিরাঙ্গায় প্রতিদিন হাজারো বাঁশ গাছ ধ্বংস হচ্ছে। ফলে দিন দিন বাঁশের উৎপাদন হ্রাস পেয়ে শূন্য হতে চলছে পার্বত্য এলাকার বাঁশ সম্পদ। বাঁশকরুল তরকারি হিসেবে ব্যবহার রোধ করা না গেলে কাঁচামাল সংকটে পড়তে পারে। এমনটাই মনে করছেন পাহাড়ের সচেতন মহল।
ইতিমধ্যে দেশের বিখ্যাত চন্দ্রঘোনা পেপার মিলে কাগজ তৈরির অন্যতম কাঁচামাল বাঁশের সংকটে কাগজ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পার্বত্য জেলায় প্রাকৃতিকভাবে বিপুল পরিমান বাঁশ জন্মে। এই বাঁশকে কেন্দ্র্র করে চন্দ্র্রঘোনায় কর্ণফুলী পেপার মিল স্থাপিত ও পরিচালিত হয়ে আসছে। এক সময় পার্বত্যঞ্চল থেকে চাহিদা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ প্রচুর পরিমাণে বাঁশ সংগ্রহ করে কাগজ উৎপাদন করত। এছাড়াও এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ দেশের সমতল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে সরবরাহ করা হতো।
যা থেকে প্রচুর পরিমানে অর্থ উপার্জনসহ এ কাজে অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে জনসংখা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাগজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী কাগজ তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে। বাঁশ সংকটের মূল কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা অবাধে বাঁশের করুল (বাঁশের চারা) নিধন ও বাঁশের ফুল আসাকে চিহ্নিত করেছে। জানা গেছে, প্রতি ৫০বছর পর পর বাঁশের ফুল ও ফল ধরে এবং তখন লক্ষ লক্ষ বাঁশ ধ্বংস হয়ে যায়।
গত দুই–তিন বছর আগে এভাবে বাঁশের ফুল ফোটায় পার্বত্যাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ বাঁশ ধ্বংস হয়ে গেছে। অধিকাংশই তরকারি হিসেবে বাঁশের করুল ব্যবহার করছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার বাঁশের চারা ধ্বংস হচ্ছে। এক সময় পার্বত্য এলাকা বাঁশশূন্য হয়ে পড়তে পারে এমনটাই মনে করছেন পাহাড়ের সচেতন মহল। এ ব্যাপারে বন বিভাগের খাগড়াছড়ির বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোমিন উর রশিদ বলেন, বাঁশের বংশ রক্ষা করতে হলে বাঁশের চারা আহরণ ও বাজারজাতকরণের উপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
[আজাদী]