নিজস্ব প্রতিনিধি:
রামুর বৃহত্তর নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্যকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার, ২৬ জুন সকাল ১১ টায় বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্যের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের বিধিবহির্ভূত সিদ্ধান্তে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ও রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল বলেন, তিনি সভায় হাইকোর্টের নির্দেশনার কথা তুলে ধরলে কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধি তা গুরুত্ব না দিয়ে রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে সভাপতি করার পক্ষে মত দেন।
এক পর্যায়ে প্রিসাইডিং অফিসার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহও সাংসদ কমলকে সভাপতি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এতে ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে সভা বর্জন করে চলে আসেন।
বিদ্যালয়ের নবগঠিত ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য ইউনুচ রানা চৌধুরী ও শিক্ষক প্রতিনিধি ছালামত উল্লাহ জানান, মহামান্য হাইকোর্টের জারি করা নির্দেশনা অমান্য করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া দূঃখজনক।
উল্লেখ্য, গত ১ জুন হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (কলেজ ও স্কুল) ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না স্থানীয় সংসদ সদস্যরা।
এমপিদের ইচ্ছামতো বেসরকারি কলেজ বা স্কুলের ব্যবস্থা কমিটির সভাপতি হওয়ার বিধান বাতিল ও অবৈধ বলে ওইদিন রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ-সংক্রান্ত প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৫(২) ও ৫০ ধারা বাতিল করা হয়েছে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে এমপিরা এখন রয়েছেন, তাঁরা কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারবেন। তবে সংসদ সদস্যকে সভাপতি করে নতুন কোনো ব্যবস্থাপনা কমিটি আর অনুমোদন দেবে না শিক্ষা বোর্ড। একই সঙ্গে বেসরকারি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কমিটিও গঠন করা যাবে না।
বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দের দায়ের করা এক রিট আবেদনের রায়ে এসব আদেশ দেওয়া হয়।
সংসদ সদস্যরা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অনেক পুরানো। বেসরকারি কলেজ-বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে থাকেন। তাঁদের স্থানীয় এমপির কথামতো চলতে হয়। ভর্তি বাণিজ্য, শিক্ষকদের রাজনৈতিক ব্যবহার নিত্যদিনের। সম্প্রতি এক সংসদ সদস্যের হাতে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠায় সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।
আরো উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে এমপিদের থাকা সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই মর্মে নির্দেশনা জারি করেছে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ইউএনও বা ডিসি’র যৌথ স্বাক্ষরে বেতনভাতা উত্তোলন করা যাবে। ২৬ মে, শনিবার এক তথ্য বিবরণীর মাধ্যমে মন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা জারি করে।
সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে উত্তোলন করা হতো।