পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার জন্য খুনিদের ভাড়া করে চট্টগ্রাম পুলিশের সক্রিয় সোর্স মুছা। আর তার গুলিতেই মিতু নিহত হন। ওই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছে। রবিবার তারা আদালতে এ জবানবন্দি দেয়। তবে পুলিশ এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকে। সোমবার আদালতের সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, গ্রেফতার দুইজনের কাছ থেকে এমন আরও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের আসল উদ্দেশ্য এখনও অজ্ঞাত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ওয়াসিম ও আনোয়ারকে রবিবার (২৬ জুন) মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট হারুন উর রশিদের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা বলে, পুলিশের সোর্স মুছা খুন করার জন্য তাদের ভাড়া করে। খুন করার আগ পর্যন্ত তারা মিতুর পরিচয় জানত না। টেলিভিশনের খবরে তারা মিতুর পরিচয় জানতে পারে। প্রত্যেক ভাড়াটে খুনিকে দুই থেকে আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়া হয় বলেও তারা জানায়।
আদালতের বিশেষ সূত্র জানায়, ওয়াসিম ১৪ পৃষ্ঠার এবং আনোয়ার ১০ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, হত্যা মিশনের জন্য ভোলা নামের একজন তাদের দুটি আগ্নেয়াস্ত্র দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক সূত্র জানায়, ভোলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা।
এর আগে রবিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার জানান, মিতু হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকা দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা পেশাদারি খুনি।
আদালতের বিশেষ সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে খুনিরা বলেছে, হত্যাকাণ্ডে সাতজন অংশ নিয়েছিল। সরাসরি অংশ নেয় মুছা, ওয়াসিম ও নবি। বাকিরা ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে ছিল। তারা হলো- আনোয়ার, রাশেদ, কালু ও শাহজাহান। মুছা মোটরসাইকেলের ধাক্কা দিয়ে মিতুকে ফেলে দেয়। ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে নবি। গুলি চালায় ওয়াসিম ও মুসা।
গ্রেফতার হওয়া আনোয়ার তার জবানবন্দিতে জানিয়েছে, ওয়াসিম মিতুকে গুলি করে। তবে ওয়াসিম দাবি করেছে, সে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। মুছাই মিতুর মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এর আগে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার জানিয়েছিলেন, ওয়াসিমই মিতুকে গুলি করে।
ওয়াসিম ও আনোয়ারের ভাষ্য অনুযায়ী, সিসিটিভিতে মুছাকে খুনের সময় মোটরসাইকেলে দেখা যায়। এ সময় নবি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিতুকে আক্রমন করে।
সূত্র জানায়, ওয়াসিম তার স্বীকারোক্তিতে বলেছে, নবি একাধিকবার মিতুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। মুছা সে সময় তার কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে গুলি চালায়।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, খুনিরা ৭.৬৫ বোর ও ৩.৩ বোরের গুলি ব্যবহার করে। হত্যার আগে ১ জুন থেকে খুনিরা পরিকল্পনা করে। এরপর ৫ তারিখ তারা মিতুকে হত্যা করে।
এদিকে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার চৌধুরীকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
সিএমপির এডিশনাল কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুলিশ খুনিদের সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। হত্যার প্রকৃত উদ্দেশ্য বের করতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, স্ত্রী মিতু হত্যার ঘটনায় এসপি বাবুল আক্তার অজ্ঞাত তিন জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর পুলিশ পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সিএমপি ডিবি অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছেন।
[বাংলা ট্রিবিউন]