প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুঃ
বছর ঘুরে আবারো ফিরে এল রামুর বহুল প্রতীক্ষিত এবং জনপ্রিয় ‘স্বর্গপুরী’ উৎসব । স্বর্গপুরী মানে স্বর্গরাজ্য। মর্তে আবার স্বর্গরাজ্য হয় নাকি! আসলে বিগত ৩২ বছর ধরে কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি গ্রামের প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারে ঠিক এমন উৎসব পালিত হয়ে আসছে। সর্বপ্রথম বন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের রামুতে এই উৎসবের প্রচলন করেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন সময়ে প্রতিবছর স্বর্গপুরী উৎসবের আয়োজন করতেন। পরে ২০০৭ সালে ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের’র মৃত্যুর পর থেকে তাঁর প্রধান শিষ্য বন বিহারের বর্তমান বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সারমিত্র মহাথের এই উৎসবের ধারা ধরে রাখেন।
বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সারমিত্র মহাথের আমাদের রামু ডটকম কে জানান, প্রতিবছরের ন্যায় চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল, শুক্রবার মহাসমারোহে স্বর্গপুরী উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। যেহেতু কারুকার্জ খচিত শৈল্পিক স্বর্গপুরী নির্মাণ করতে সময় লাগে তাই গত একমাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। বর্তমান স্বর্গপুরী নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। এখন কেবল অপেক্ষা শুধু উৎসব উদযাপনের।
রামুর এই স্বর্গপুরী উৎসব এটি কালে সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ অংশে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের আদলে এবং অনুকরণে বর্তমান বিভিন্ন স্থানে স্বর্গপুরী উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। তবে রামুর এই স্বর্গপুরী উৎসবে এতটুকু ভাটা পড়েনি। বরং দিন দিন এর পরিধি আরো বেড়েই চলেছে।
এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে মূলত জীবদ্দশায় মানুষ যে কর্ম করে সেই কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন কুলে তার জন্মান্তর ঘটতে পারে এমন ধারণা দেওয়া হয়। সংসারে মানুষ জন্ম-মৃত্যুর গোলকধাধাঁয় পড়ে ভবচক্রে ঘুরতে ঘুরতে কখনো স্বর্গও লাভ করতে পারে। কিন্তু সেখান থেকেও নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে তাকে চ্যুত হতে হয়। নিজ নিজ কর্মগুণে বা কর্মদোষে মানুষ বিভিন্ন কুলে জন্ম গ্রহণ করছে এমন বৌদ্ধিক ধারণা থেকে উক্ত স্বর্গপুরী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ, একুশে পদকপ্রাপ্ত, উপ-সংঘরাজ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের জানান, স্বর্গপুরী উৎসব এটা এখন আর একক কারো উৎসবে আটকে নেই। এটা এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। আমাদের অসাম্প্রদায়িক এই বাংলাদেশে আসলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি এবং উৎসব-পার্বন সমূহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়াতে যুগ যুগ ধরে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। ধর্ম যার যার উৎসবটা সবার হয়ে যায়। রামুর সুদীর্ঘ দিনের এই স্বর্গপুরী উৎসবের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এটা একটা ভাল দিক।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে দেখা যায় বিভিন্ন বৌদ্ধপল্লী থেকে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে কীর্তন সহকারে বিভিন্ন দল স্বর্গপুরী এবং সংসারচক্র মেলায় আসেন। এজন্য স্থানীয় ভাষায় তাদেরকে বলা হয় ‘কান্ডবাজি’। সকাল ১০টা থেকে সংঘদানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া উৎসবের মূল এই অনুষ্ঠান শুরু হয় দুপুর ২টার দিকে। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এই উৎসব উপভোগ করতে আসেন।