সরকারকে চাপে ফেলতে ও বন্ধুহীন করে তুলতে বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করেছে সরকারবিরোধী শক্তিগুলো। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দেশীয় শত্রু যেমন আছে, তেমনি আছে বিদেশি শক্তির মদদও। গুলশানের কূটনীতিক জোনের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পরে বিষয়টিকে নিয়ে এভাবেই মুল্যায়ন করছেন ক্ষমতাসীনরা। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এ হামলার সঙ্গে দেশি-বিদেশি মদদের কথা উল্লেখ করেছেন। সকালে রাজধানীতে অন্য একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, তখন এ ধরনের ঘটনা প্রত্যেকটা কাজকে থমকে দেয়। দেশ যখন এগিয়ে যায়, মানুষ তখন আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়। জানি না ঠিক সেই সময় কেন আমাদের ওপর এক একটা আঘাত চলে আসে।
সূত্র মতে, সরকারের উন্নয়নে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোই যখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসারিত করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে আর এগুলোকে ঠেকাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারকে বেকায়দায়-চাপে ফেলার উদ্দেশ্যেই এ হামলা। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এ ধরনের হামলার উদ্দেশ্য হলো বিদেশি মিডিয়ায় ঝড় তোলা। বিদেশি বন্ধুদের কাছে প্রমাণ করা যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পাশাপাশি সরকারকে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে ‘প্রেসার’ সৃষ্টি করার একটি গভীর পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকারের প্রভাবশালী দু’জন মন্ত্রী আবার বলেন, এসব ঘটনা রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এখানে বিশেষ মহলের ইন্ধন রয়েছে। আছে একটি বিদেশি এজেন্সির মদদও। এটি নেহায়েত সন্ত্রাসী হামলা। ওই মন্ত্রীরা আরও জানান, সরকারকে যতই বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ততই সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।
নীতি-নির্ধারকদের মতে, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে যখন সরকার সক্ষম হয়েছে, তখন পুরোহিত, সেবায়েত ও পাদ্রি টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। এটাও যখন সরকার শক্ত হাতে দমন করতে সক্ষম হয়েছে তখন টার্গেট করা হয়েছে বিদেশি নাগরিকদের। যেন সরকারের সঙ্গে এসব বন্ধু রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক নষ্ট করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। ক্ষমতাসীনরা বলেন, এসব হামলার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি গ্রুপ মাঠে থেকে কাজ করছে কিন্তু এসবের মূল ‘ক্রিড়নক’ বিএনপি-জামায়াতই।
গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে জানতে বাংলা ট্রিবিউন সরকারের অন্তত তিন জন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে। এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে যে সখ্য-সম্পর্ক শেখ হাসিনার সরকার ইতোমধ্যে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, তাতে ভীতশ্রদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াতই এসব ঘটনার ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে। তা না হলে গুলশানের সন্ত্রাসী হামলাকে কেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রক্তাক্ত অভ্যুত্থান বলে সমর্থন জানাবেন? তিনি আরও বলেন, তাদের টার্গেট সরকারকে বেকায়দায় ফেলে সুবিধা আদায় করে নেওয়া। একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় অধষ্ঠিত হওয়া। খালেদা জিয়া এই ঘটনাকে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান বলে স্বীকৃতি দিয়েই দিয়েছেন। সুতরাং কার ইন্ধনে এ ঘটনা হয়েছে, এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখন তার মনে ব্যথা, কেন সফল হলো না।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জ্বালাও-পোড়াও, পাদ্রি হত্যা, সংখ্যালঘুদের হুমকি ও সর্বশেষ বিদেশি হত্যা এসবই একইসূত্রে গাঁথা। ধর্মের আবরণে জামায়াত-বিএনপি ও কিছু বিদেশি শত্রু এসব ঘটনার ইন্ধনদাতা। নাসিম বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেটা কিভাবে নষ্ট করা যায়, সেই চক্রান্ত বাস্তবায়নে নেমেছে বিএনপি-জামায়াত। শিগগিরই সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করা হবে। সত্য সামনে উপস্থাপন করা হবে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, সংখ্যালঘু, পাদ্রি, সেবায়েত ও সর্বশেষ বিদেশি হত্যাকাণ্ড একইসূত্রে গাঁথা। এরা একেকটি কৌশলে এগোয়, ব্যর্থ হলে আরেক কৌশল গ্রহণ করে। তিনি বলেন, এখানে দেশি-বিদেশি শত্রুর ইন্ধন রয়েছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কলা-কৌশলীরা মনে করেন, যে নামে, বা যারাই ইসলাম ধর্ম কায়েমের নামে মানুষ হত্যা করছে, এসব হামলার সঙ্গে জড়িত তারা শুধু মাঠের সন্ত্রাসী। পর্দার অন্তরালে আসলে তারাই রয়েছেন, যারা শেখ হাসিনার উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত। যারা নতুন নতুন অঘটন ঘটিয়ে ‘ক্যু’ করে শেখ হাসিনার সরকারকে হটিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রক্ষা করতে চান।
[বাংলা ট্রিবিউন]