ইমাম খাইর:
প্রতি বছর ঈদ আসে, ঈদ যায়। হাসি খুশির বারতা নিয়েই মূলতঃ ঈদের আগমন। ‘ঈদ’ শব্দেই ‘আনন্দ’ লুকায়িত।
কিন্তু এই ‘ঈদ’ সব ঘরে, সবার কাছে আনন্দময় হয়ে ওঠেনা। হতে পারেনা। এটা মোটেও সম্ভব নয়।কারণ, মানব জীবন বৈচিত্রময়।
ইসলামের ভাষ্য মতে- ‘ঈদ’ পূন্যবানদের জন্য আনন্দের, পাপিদের জন্য অভিশাপের’।
যারা তিরিশ রোজা রেখেছে, জীবনের গুনাহ মাফ করতে পেরেছে, মূলতঃ ওইসব লোকদের জন্য ঈদের সুসংবাদ। তারাই ঈদের প্রকৃত হকদার।
আর যারা রমজানের কদর বোঝেনি, ঠিক মতো রোজা-তারাবিহ করেনি, তাদের ঘরে ‘ঈদ’ ফলহীন বৃক্ষের মতো।
রমজানে এমন লোকও দেখেছি, যিনি ‘মুসলমান’ দাবীদার, তবে রোজা রাখেনি। দিনের বেলায় পেট পুরে তিন বেলা খেয়েছে। অন্য ‘এগার মাস’ আর ‘রোজার মাসে’ তার চরিত্রে পার্থক্য হয়নি। নির্লজ্জভাবে রোজাদারদের ‘ইফতার’র টেবিলে বসে ‘বেহায়া’ ‘নাস্তা’ করেছে।
আর কিছু লোক রোজা রেখেও মিথ্যা বলা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি ছাড়তে পারেনি।ওইসব লোকদের জন্য ‘ঈদ’ আনন্দের নয়, অভিশাপের।
তাদের জন্য ঈদ আসেনি। তারা বড্ড হতভাগা (!!!)
আল্লাহ ওইসব লোকদের সুমতি দান করুন। আগামী থেকে তাদেরও হেদায়তের পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
গত ১ জুলাই শুক্রবার ঢাকা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে জঙ্গি হামলায় হতাহতদের পরিবারের ঈদ আর আমাদের ঈদ কি এক সমান? তাদের ঈদের অনুভুতি আর আমাদের আনুভুতি কি এক? কোনভাবেই না, হতে পারেনা।
নির্মম এই ঘটনার নিন্দা জানাই। সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন বিচার চাই। হতাহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাই। যে বুকে বোবা কান্না, সেবুকেই আল্লাহ আনন্দের সমিরণ বয়ে দিন। তারা স্বস্থি ফিরে পাক। এটিই প্রত্যাশা।
গত ক’দিন ধরে আকাশ মুখ ভার করে আছে। অনবরত বৃষ্টি ঝরছে। রাস্তাঘাটে হাটুজল। ঘরবাড়ীতে পানি ঢুকেছে। অনেক ঘরে চুলা জলছেনা। ঈদ কেনাকাটা তো- দূরের কথা, পুরনো কাপড়ও শুকাতে পারছেনা। তাদের জন্য সমবেদনা।
হাসপাতালের বেড়ে কাতরাচ্ছে অসংখ্য বনি আদম। দু’দিন আগেও যে মানুষটি প্রাণচঞ্চল, সে মানুষটি আজ হাসপাতালের নির্দয় বিছানায় শুয়ে পড়ে আছে। ঈদের দিনে তার কি অনুভুতি হবে।
ঈদের অর্থ যদি ‘আনন্দ’ হয়, হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটির জন্য কি অর্থ হবে? সে কি আনন্দ করার সুযোগ পাচ্ছে? না। সে কিভাবে জরা-যন্ত্রণায় আনন্দ উপভোগ করবে?
সুতরাং ঈদ সবার কাছে আনন্দের নয়। খুশির নয়। এরপরও ক্ষনিক দুঃখ কেটে সেও ফিরে পাক আনন্দময় সময়। এটিই চাওয়া।
আমরা সংবাদকর্মী। সারাক্ষণ সংবাদেই কেটে যায় সময়। বউ-বাচ্চার হকও ঠিক সময় আদায় করতে পারিনা। সংবাদের প্রয়োজনে খাবারের টেবিল থেকেও দৌঁড় মারতে হয়। ঘুমের বিছানা ছাড়তে হয়।
গুলিতে লাশ পড়ছে, সবাই পালাচ্ছে। আর ওই সময় কে- গুলি ছুঁড়ছে, আর কার গুলিতে কে মরছে, সে ছবি সংগ্রহ করে সংবাদ করাটাই আমাদের কাজ।
সবাই ঈদ করবে। আনন্দে ঘুরবে। অন্যের আনন্দের সংবাদ প্রচার করেই আমরা শান্তি-আনন্দ পাই।
এ কারণে আমাদের পেশা আর অন্যসব পেশায় অনেক ডিফারেন্স। অবিশ্রান্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় থেকেও আমরা শান্তি পাই।
সবার ঈদ হোক আনন্দময়।
দুঃখী মানুষের ঘরেও নেমে আসুক ঈদের সুখ।
সবাইকে ঈদ মোবারক। মা’য়াসসালাম।
লেখক: যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক
কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন)
০১৮১৫৪৭১৪০০