সম্প্রতি রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা’ বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনে বিভিন্ন স্কুল পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, শিক্ষা গবেষক ও বিশ্লেষক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন চলাকালীন সময়ে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার হালচাল, সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, সমাপনী পরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীর।
বাংলা ট্রিবিউন: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এখানে আপনিও উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাই।
রাশেদা কে চৌধূরী: মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ আপামর শিক্ষা পরিবারের কি কি কর্মপরিকল্পনা করা প্রয়োজন এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব সে বিষয়ে একটি উন্মুক্ত আলোচনা। এখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, শিক্ষা গবেষকদের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। মূলত মানসম্মত শিক্ষা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যেই এই সম্মেলন।
বাংলা ট্রিবিউন: মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন।
রাশেদা কে চৌধূরী: আসলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা তো একটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ব্যাপার। রাতারাতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরিবিলি সুন্দর সুশৃঙ্খল ক্লাসরুম, শিক্ষকদের সুন্দর আকর্ষণীয় তথ্য বহুল পাঠদান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি ও তা সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে হবে। স্কুলে শিক্ষার্থী ধরে রাখতে আরও বেশকিছু ভালো প্রকল্প চালু রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
বাংলা ট্রিবিউন: জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের স্তর করা হয়েছে। ফলে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরিক্ষা বাতিল করে অষ্টম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত হবে। এটা কতখানি সুফল আনবে বলে মনে করেন?
রাশেদা কে চৌধূরী: জাতীয় শিক্ষানীতি যখন আমরা তৈরি করি তখনই প্রাথমিকের স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নে যেতে দেরি হয়েছে। বাস্তবায়নের আগেই পঞ্চম শ্রেণিতে একটি ও অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা আমরাই আলোচনা করে চালু করেছিলাম, সুফল দেবে এই ভেবে। কিন্তু এ বিষয়ে গত কয়েকবছরের অভিজ্ঞতা তো খুবই খারাপ। কোচিং ব্যবসা, নোট বই, গাইড বইয়ের চাপে শিক্ষার্থীদের অবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়লো। শিক্ষা ব্যবস্থার চরম অবনতি হলো। ফলে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাটি সর্বশেষ বাতিল করা হলো।
বাংলা ট্রিবিউন: পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী বাতিল করা হয়েছে এটাতে বেশিরভাগ শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কোন বছর থেকে এই পরীক্ষাটি বাতিল হবে তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাশেদা কে চৌধূরী: পরীক্ষা যেটা বাতিল বলা করা হয়েছে, সেটা এ বছর থেকেই বাতিল করা উচিত বলে আমি মনে করি। এটা আর এক বছরও অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত নয়।
[বিশেষ দ্রষ্টব্য: পাঠকের স্বার্থে সাক্ষাৎকারটি বাংলা ট্রিবিউন থেকে নেওয়া হয়েছে।]