নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী ২০ নভেম্বর চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
রোববার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা আগামী ২০ নভেম্বর শুরু হবে এবং শেষ হবে ২৭ নভেম্বর। এবছর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা সম্ভাব্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার। এরমধ্যে প্রাথমিকে ৩১ লাখ ২৫ হাজার এবং ইবতেদায়িতে তিন লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী।
মন্ত্রী জানান, ২০১৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী ছিল ২৯ হাজার ৭শ ৬৪ জন, পাশের হার ছিল শতকরা ৯৮ দশমিক ৫২ এবং ইবতেদায়িতে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৪ জন। পাশের হার ছিল শতকরা ৯৫ দশমিক ১৩।
প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও তাতে মন্ত্রিসভার সায় না পাওয়ায় এবারও আলাদাভাবে দুটি সমাপনী পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।
এর আগে অনুষ্ঠিত সভায় পরীক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ, অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান ও অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম আল হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ একাডেমীর (ন্যাপ) মহাপরিচালক মো. ফজলুর রহমান ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বিজিপ্রেসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রাথমিক শিক্ষা ও ইবতেদায়ী শিক্ষার সমাপনী পরীক্ষার ‘ইংরেজী’ ২০ নভেম্বর, ‘বাংলা’ ২১ নভেম্বর, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’ এবং ইবতেদায়ী শিক্ষার ‘আরবি’ ২৩ নভেম্বর, প্রাথমিক শিক্ষার ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ এবং ইবতেদায়ী শিক্ষার ‘কুরআন ও তাজবীদ এবং আকাইদ ও ফিকহ্’ ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া প্রাথামিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষার ‘গণিত’ ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সকল পরীক্ষা সকাল ১১ টায় শুরু ও দুপুর ১.৩০ টায় শেষ হবে।
পরীক্ষার সময় আড়াই ঘণ্টা। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার সময় ২০ মিনিট অতিরিক্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৩১ লাখ ২৫ হাজার এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পরীক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রচলন হয়। পরের বছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয় ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা।
আর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা।
আগে পঞ্চম শ্রেণিতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী চালুর পর ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছিল।
এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে গত ১৮ মে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হলে সমাপনী পরীক্ষা হবে কি না- সেই প্রশ্ন তৈরি হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তফিজুর রহমান ফিজার গত ২১ জুন সাংবাদিকদের বলেন, কথা হয়ে গেছে, এবার থেকেই পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আর হবে না। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণিতে একটি সমাপনী পরীক্ষা হবে।
কিন্তু ২৭ জুন পঞ্চমের সমাপনী বাতিলের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলা হলে তা বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার উপস্থাপন করতে বলা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মত প্রাথমিক সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা চলতে থাকবে। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা মন্ত্রিসভা মানেনি, এবারও পরীক্ষা হবে।
সূত্র: রাইজিংবিডি