অনলাইন ডেস্কঃ
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কের মধ্যে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, “যদিও সংক্রমণের ঘটনা অত্যন্ত কম, তবুও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের সকল পর্যায়ে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব কোচিং সেন্টারও এ সময় বন্ধ থাকবে।
“অভিভাবকরা উদ্বেগ জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কেউ কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাব, (স্কুল ছুটির সময়) শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বাড়িতে থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
“শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তার মানে এই নয় সর্বত্র তারা ঘুরে বেড়াবে, বেড়াতে যাবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে যাতে সংক্রমণ না হয়। কাজেই সেটি মাথায় রেখে অভিভাবকরা যেন নিশ্চিত করেন, শিক্ষার্থীরা যার যারা বাড়িতে থাকবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার যে নির্দেশ রয়েছে তা প্রতিপালন করবে।”
গত ডিসেম্বরের শেষে চীন থেকে ছড়াতে শুরু করা নভেল করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে প্রায় দেড়শ দেশে পৌঁছে গেছে। বিশ্বজুড়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৪৭০ জনের।
এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ সীমান্ত বন্ধ করে চলাফেরায় বিধিনিষেধ ও ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে, বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।
ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশের মত দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং ভারতও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মত করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়তে শুরু করে। অনেকেই শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্কুল বন্ধের দাবি তোলেন। তবে সরকারের তরফ থেকে এতদিন বলা হচ্ছিল, বাংলাদেশে এখনও সেই পরিস্থিতি হয়নি।
এর মধ্যে সোমবার আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে আরও তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়।
প্রায় একই সময়ে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে এসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেন, “আগামী মাসের মাঝামাঝি থেকে গ্রীষ্মের ছুটি ও রোজার ছুটি শুরু হবে। আমরা দেখব অবস্থা কী রকম হয়। যদি প্রয়োজন হয় সেই ছুটির সঙ্গে আমরা (এই ছুটিটা) অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করব।”
আগামী ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার সূচি রয়েছে। এ পরীক্ষার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, “এখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি। সতর্কতামূলক, প্রতিরোধমূলক যা কিছু আমাদের প্রয়োজন হবে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেব, কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আমরা পিছপা হব না।
“কিন্তু আগ বাড়িয়ে যেটার প্রয়োজন নেই সে রকম কোনো সিদ্ধান্তও নিতে চাই না। বৈশ্বিক এবং দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
বঙ্গবন্ধুর জন্মশকতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ বা আশাপাশের উপযুক্ত স্থানে মঙ্গলবার ১০০ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কোনো রকম জমায়েত ছাড়া এই গাছগুলো রোপনের বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিশ্চিত করতে হবে, এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না।”
শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের আধা ঘণ্টা আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক জরুরি সভা করে ১৮ থেকে ২৮ মার্চ সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের ‘দাবি ও পরামর্শের ভিত্তিতে’ তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের এই সময়টা পরে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া হবে। আপাতত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম চলবে; আবাসিক হলগুলোও খোলা থাকবে।
ঢাবির হল খোলা রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সব দিক বিবেচনা করে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে, তারা হল খোলা রাখবে কি না।
পরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে।
“৩১ মার্চের পরে আমরা যদি দেখি পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেছে, আমরা খুলে দেব।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ