অনলাইন ডেস্কঃ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়াল। গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে দু’জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত ৫১ জনে পৌঁছাল। দেশে এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত সারাদেশে ৬০ হাজার ১৫ জনকে হোম কেয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়। তাদের মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয় ২৮ হাজার ৭৫৯ জনকে। বর্তমানে আছেন ২১ হাজার ২৫৬ জন। এ ছাড়া করোনা সন্দেহে এ পর্যন্ত ৩৫৯ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। করোনা শনাক্ত না হওয়ায় তাদের মধ্যে ২৮৮ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭১ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩৮ জন। করোনা সন্দেহে এ পর্যন্ত এক হাজার ৬০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫১ জনের শরীরে।
করোনায় দেশে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপরই দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। ওই মৃত্যুর পর আতঙ্ক আরও বাড়ে। এরপর প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে সব যাত্রী পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে বলে সরকারি ঘোষণায় বলা হয়। সরকারিভাবে ঘোষণা না করলেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরো দেশে কার্যত ‘লকডাউন’ চলছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হন। ওই ভিডিও কনফারেন্সেই তিনি সরকারি ছুটি বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন। একই সঙ্গে তিনি পহেলা বৈশাখে জনসমাগম এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানান। এতে অনেকেই ধারণা করছেন, করোনা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে গণছুটি আরও প্রলম্বিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বর্তমানে দেশে এ করোনাভাইরাসটির পিকটাইম চলছে। সরকারি ছুটির দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিন আগামী ৯ এপ্রিল তা শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রী সরকারি ছুটি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে সত্যিকার অর্থে ভালো কাজ করেছেন। কারণ, এ সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সে সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, তাহলে আগের মতো সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে। আর পরিস্থিতি খারাপ হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রথম করোনার সংক্রমণ, আক্রান্ত ৩ জন :
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। ওই দিন তিনজন সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে দু’জন ইতালির দুটি শহর থেকে দেশে ফেরেন। এদের একজনের সংস্পর্শে আসায় পরিবারের অপর এক সদস্য আক্রান্ত হন। প্রথম আক্রান্ত তিনজনকেই ১৪ মার্চ করোনামুক্ত ঘোষণা করে আইইডিসিআর।
আক্রান্ত বেড়ে ৫ জন :
তবে ১৪ মার্চ রাতে আরও দু’জনের শরীরে করোনার সংক্রমণের ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আক্রান্তদের একজন ইতালি ও অন্যজন জার্মানিফেরত। দু’জনই পুরুষ।
আক্রান্ত বেড়ে ৮ জন :
১৬ মার্চ আরও তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। করোনা আক্রান্ত ইতালিফেরত ব্যক্তির মাধ্যমে তার স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান আক্রান্ত হন। এ নিয়ে ওই দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আটজনে পৌঁছায়। ওই সময় পর্যন্ত ২৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১০ জন :১৭ মার্চ আরও দু’জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। তাদের একজন ইতালিফেরত। তিনি সরকারি হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। আক্রান্ত অপর ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রফেরত এক প্রবাসীর সংস্পর্শে থেকে আক্রান্ত হন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে পৌঁছায়।
প্রথম মৃত্যু ও আক্রান্ত বেড়ে ১৪ জন :
১৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমিত প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ওই ব্যক্তির বিদেশফেরত একজনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন। নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর তিনি উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে চলে যান। একই দিন নতুন করে আরও চারজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকায় একজন আক্রান্ত হন। অন্য তিনজনের মধ্যে দু’জন ইতালি এবং একজন কুয়েতফেরত। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১৪ জনে পৌঁছায়। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৪১ জনের।
আক্রান্ত বেড়ে ১৭ জন :
১৯ মার্চ নতুন করে আরও তিনজন আক্রান্ত হন। তারা ইতালিফেরত এক ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং একই পরিবারের সদস্য। নতুন আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন নারী। তার বয়স ২২ বছর। অপর দুই পুরুষের একজন ৬৫ বছর এবং অন্যজনের বয়স ৩২ বছর। আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জনে পৌঁছায়।
আক্রান্ত বেড়ে ২০ জন :
২০ মার্চ আরও তিনজনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে একজন নারী। তার বয়স ৩৮ বছর। দুই পুরুষের মধ্যে একজনের বয়স ৩০ এবং অন্যজনের ৭০ বছরের বেশি। ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তি সম্প্রতি ইতালি ও জার্মানি থেকে ঘুরে এসেছেন। তার সংস্পর্শে থেকে একজন সংক্রমিত হন। অন্যদিকে আক্রান্ত নারী ইতালিফেরত একজনের সংস্পর্শে ছিলেন। ওই দিন আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছায়।
মৃত্যু বেড়ে ২, আক্রান্ত বেড়ে ২৪ জন :
২১ মার্চ করোনাভাইরাসে দেশে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ওই ব্যক্তি বিদেশফেরত এক স্বজনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তিনি নানা রকম শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। নতুন করে আরও চারজন আক্রান্ত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তারা সবাই বিদেশফেরত এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে ছিলেন। কিন্তু কে কোন দেশ থেকে এসেছেন, কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ওইদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে পৌঁছায়।
আক্রান্ত বেড়ে ২৭ জন :
২২ মার্চ আরও তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে দু’জন পুরুষ এবং একজন নারী। নতুন আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দু’জন বিদেশ থেকে এসেছেন। অন্যজন আগে আক্রান্ত এক রোগীর সংস্পর্শে ছিলেন। ওই দিন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, প্রথম আক্রান্ত তিনজনের সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আরও দু’জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
মৃত্যু বেড়ে ৩, আক্রান্ত বেড়ে ৩৩ :২৩ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা তিনজনে পৌঁছায়। ওই দিন নতুন করে আরও ছয়জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ জনে পৌঁছায়। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তিন পুরুষ এবং তিন নারী। আক্রান্তদের মধ্যে একজন চিকিৎসক ও দু’জন নার্স।
মৃত্যু বেড়ে ৪, আক্রান্ত বেড়ে ৩৯ :
২৪ মার্চ আরও একজনের মৃত্যু হয়। ওইদিন মৃতের সংখ্যা বেড়ে চারজনে পৌঁছায়। একই সঙ্গে ওইদিন নতুন করে আরও ছয়জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জনে পৌঁছায়। ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর পরিচালক জানান, মৃত ব্যক্তির বয়স ৭০ বছরের ওপরে। তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন আক্রান্তদের মধ্যে একজন সম্প্রতি সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করে দেশে ফেরেন। বাকি চারজন আগে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন। ওই দিন পর্যন্ত মোট ৭১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ৩৯ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়।
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ জন :
২৫ মার্চ প্রাণঘাতী করোনায় আরও একজনের মৃত্যুর খবর জানায় আইইডিসিআর। এ নিয়ে ওই দিন মৃতের সংখ্যা পাঁচজনে পৌঁছায়। তবে ওই দিন নতুন করে কারও শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। এ কারণে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ জনই ছিল। ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক জানান, ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত একজনের স্বজন ছিলেন। মৃত ওই ব্যক্তি গত ১৮ মার্চ আক্রান্ত হন। এরপর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ২১ মার্চ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে আক্রান্ত ছিলেন। ওইদিন আইইডিসিআর পরিচালক আরও দু’জন আক্রান্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার খবর জানায়। এ নিয়ে ওইদিন পর্যন্ত আক্রান্ত সাতজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
আক্রান্ত বেড়ে ৪৪ জন :
২৬ মার্চ নতুন করে আরও পাঁচজন আক্রান্ত হন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ জনে পৌঁছায়। তবে ওই দিন কেউ মারা যাননি। মৃতের সংখ্যা পাঁচজনই থাকে। আক্রান্তদের মধ্যে আরও চারজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। ওইদিন জানানো হয়, আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক জানান, নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে সবাই পুরুষ। পাঁচজনের মধ্যে একজন বিদেশ ফেরত। এ ছাড়া তিনজন আগে থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন। অন্যজন কীভাবে সংক্রমিত হলেন তা জানা যায়নি। তবে আইইডিসিআর তার পুরো ইতিহাস জানার চেষ্টা করছে।
আক্রান্ত বেড়ে ৪৮ জন :
২৭ মার্চ নতুন করে দুই চিকিৎসকসহ চারজন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। নতুন করে আক্রান্ত হওয়া চার ব্যক্তির মধ্যে একজন পুরুষ এবং তিনজন নারী। তাদের মধ্যে দু’জন ঢাকার এবং দু’জন ঢাকার বাইরের। আক্রান্ত চারজনের মধ্যে দু’জন চিকিৎসক। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন অন্যদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন। তবে একজনের ঠিক কোথা থেকে ছড়িয়েছে, সে উৎস এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আক্রান্ত বেড়ে ৪৯ :
২৮ ও ২৯ মার্চ পরপর দু’দিন দেশে করোনায় কোনো আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২৮ মার্চ আরও চারজন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। ওই দিন পর্যন্ত ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। টানা দু’দিন পর ৩০ মার্চ নতুন করে একজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। ওই দিন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জনে পৌঁছায়। ওই দিন আরও চারজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। অর্থাৎ, আক্রান্ত ১৯ জন সুস্থ হন।
আক্রান্ত বেড়ে ৫১ জন :
সর্বশেষ গতকাল ৩১ মার্চ অনলাইন ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নতুন করে আরও দু’জনের শরীরে করোনার সংক্রমণের কথা জানান। পরিচালক বলেন, আক্রান্ত দু’জনই পুরুষ। তাদের একজনের বয়স ৫৭ বছর। তিনি সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে এসেছেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো, তবে ডায়াবেটিস রয়েছে। অন্যজনের বয়স ৫৫ বছর। তার বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই। তার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তিনি কীভাবে সংক্রমিত হয়েছেন, সে বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান করছে আইইডিসিআর। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ জনের পৌঁছাল। গতকাল সুস্থ হয়ে আরও ছয়জন বাড়ি ফিরেছেন। এ নিয়ে মোট ২৫ জন সুস্থ হলেন। মৃতের সংখ্যা পাঁচজনই। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭৫ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩৮ জন। গতকাল পর্যন্ত এক হাজার ৬০২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
পিকটাইম চলছে, সর্বত্র সতর্কতা জরুরি :
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও রাজ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে আট লাখের ওপরে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার। বাংলাদেশে এ রোগটির সংক্রমণ শুরু পর প্রথমে বিদেশফেরত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর পর ওই এলাকাও রাজধানীর অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এভাবে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত ও বিদেশফেরত ব্যক্তিদের পৃথক করে রাখতে ‘লকডাউন’ করে রাখা হয়।
কিন্তু সরকারি ছুটি ঘোষণার পর স্রোতের মতো গ্রামে ফেরে হাজারো মানুষ। এর আগে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা গ্রামে অবস্থান করছিলেন। তারা কোয়ারেন্টাইনের শর্ত না মেনে রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করছিলেন। এই কারণে কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কিছুটা নিশ্চিত করেছেন। তবে বেশিরভাগ বিদেশফেরত ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা জানিয়েছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত চার লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৩ জন দেশি-বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। গতকাল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ৬০ হাজার ১৫ জন। অর্থাৎ, ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ মানুষ নিয়ম মেনে ঘরে থাকছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনরা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে জানিয়েছেন, তালিকায় থাকা বিদেশফেরত বেশিরভাগ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, বিদেশফেরতরা ঠিকানা হিসেবে যেসব স্থানের নাম উল্লেখ করেছেন, সেখানে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। তারা অন্যত্র থাকছেন।
দেশের অন্তত পাঁচজন ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক থেকে দুই সপ্তাহ আগে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের মাধ্যমে এটি ছড়ালে এপ্রিলের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই তা প্রকাশ পাবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা করছেন। তাদের অভিমত- আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা নাগরিকদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রাখা গেলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এখন কাজ হবে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে তারাসহ স্বজন ও আশপাশের ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা। সেটি সম্ভব হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান জানান, এই সময় দেশে করোনাভাইরাসটির পিকটাইম হতে পারে। সংক্রমণ কোন পর্যায়ে ছড়াবে, তা এই সময়ের মধ্যেই প্রকাশ্যে আসবে। সুতরাং এই সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।
সূত্রঃ সমকাল