নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া:
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির নির্বাচিত আইনী লড়াইয়ের কারণে কমিটি নেই গত ছয়মাস ধরে। এ সুযোগে সমিতির গুনধর তিন কর্মচারী বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি নুরুল আলম সিকদারের যোগসাজসে সমিতির আয়বর্ধক মুলক প্রকল্প গুলো ইজারা দেয়া ও দোকান লাগিয়তের মাধ্যমে লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপের ফুঁসে উঠতেছে বেশির ভাগ সমিতির সদস্যরা।
ইতোমধ্যে সমিতির তিন কর্মচারী যথাক্রমে হিসাব রক্ষক শাহআলম, সমিতির বিধি লঙ্গন করে দায়িত্ব পালনকারী সহকারী ব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন ও ক্যাশিয়ার নুরুল আলম পরস্পর যোগসাজসে সমিতির নানাভাবে ভুঁয়া বিল ভাউচার তৈরী করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন। এমনকি সমিতির নতুন ভবন নির্মাণ খাতে তাঁরা অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির অধিকাংশ সদস্য। এ অবস্থার কারণে সমিতির সকলস্থরের সভ্য ও পোষ্যদের মাঝে এনিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁরা অবিলম্বে সমিতির দুর্নীতিবাজ তিন কর্মচারীকে অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তাঁরা সমিতির দায়িত্ব পালন করলে অদুর ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ ভুসম্পদ ও দোকানপাট এবং চিংড়ি জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি করেছেন সমিতির সভ্যরা।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছিলো। নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৪ ফেব্রুয়ারী। তিনবছর দায়িত্বপালন করে মেয়াদ শেষ হওয়ার পুর্বে। পরবর্তীতে নির্বাচন অনুষ্টানের জন্য জেলা সমবায় কর্মকর্তা সমবায় আইন ও বিধি মোতাবেক ৫ সদস্য বিশিষ্ট চারমাসের জন্য একটি অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি সমবায় সমিতি আইন ও বিধি মোতাবেক নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করেন। সেই হিসেবে ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন অনুষ্টানের দিন ধার্য্য করা হয়। কিন্তু সম্পুর্ণ বেআইনী ও বিধি লঙ্গন করে সমিতির দায়িত্বে থাকা (সাবেক সভাপতি) নুরুল আলম সিকদার উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।
উচ্চ আদালত ওই রিট পিটিশনের আলোকে ৭ ফেব্রুয়ারী তারিখের নির্বাচন স্থগিত ঘোষনা করেন।
সমিতির সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন স্থগিত পর গত ছয়মাস ধরে সমিতিতে নির্বাচিত কোন কমিটি না থাকার সুযোগে সমিতির গুনধর তিন কর্মচারী নানা কায়দায় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সমিতির লাখ লাখ টাকা লুটপাটে মেতে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ইতোমধ্যে ওই তিন কর্মচারী বিগত কমিটির যোগসাজসে পূর্বের কমিটির রেজুলেশন ও মেয়াদ দেখিয়ে অবৈধভাবে সমিতির দোকান বরাদ্ধ ও সমিতির রিজার্ভ জমি লাগিয়ত দিয়ে, অবৈধভাবে ভাতা গ্রহন করে, সমিতির বিভিন্ন প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখিয়ে ভুঁয়া বিল ভাউচার তৈরী করে লাখ লাখ টাকা হরিলুট করেছে।
এছাড়াও সমিতির বিদায়ী কমিটির মেয়াদকালে নিস্পত্তি হয়নি এমন প্রায় শতাধিক সালিশী মামলার রায় বাণিজ্য চালাচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থী লোকজনকে তাঁরা নানাভাবে হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। একইভাবে সমিতির সাধারণ সভার সিদ্বান্ত অমান্য করে এ তিনকর্মচারী সমিতির মালিকানাধীন বিভিন্ন চিংড়ি প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সমিতির বেশির ভাগ সদস্য দাবি করেছেন, নির্বাচিত কমিটি না থাকার সুযোগে অভিযুক্ত তিনকর্মচারী গত ছয়মাসে সমিতির নানা খাতে ভুঁয়া বিল ভাউচার তৈরী করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। তদন্ত করলে তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়বে।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সমিতির সভ্য, পোষ্য ও অংশীদারসহ প্রায় ৪০হাজার জনগোষ্টির সম্পদ রক্ষার স্বার্থে অভিযুক্ত তিন কর্মচারীকে অবিলম্বে সমিতি থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সমিতির ক্ষুদ্ধ সদস্যরা।
এব্যাপারে তাঁরা তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।