এম.এ আজিজ রাসেল:
শহরে একের পর এক ড্রেন দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা। কেউ অতীতে পৌর কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে আবার কেউ প্রভাব কাটিয়ে এসব স্থাপনা গড়ে তুললেও কেউ বাধা প্রদান করেনি। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোত আপন ধারায় প্রবাহিত হতে না পেরে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় আর মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।
বরাবরের মত চলতি বর্ষা মৌসুমের গত বেশ কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শুধু প্রবল বৃষ্টি হয় স্বল্প সময়ের মাঝারি বৃষ্টিপাতেই অনেক সময় রাস্তায় পানি জমে যায়। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় কখনো হাটু, কখনো কোমর পানি আবার কখনো ঘর বাড়িতে পানি উঠে পৌরবাসীকে দূর্ভোগে পড়তে হয়।
শহরের নালার উপর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য অনেক দিন ধরে পৌরবাসী দাবি জানিয়ে আসলেও অদৃশ্য কারণে এতদিন উচ্ছেদ করা হয়নি এসব স্থাপনা। অথচ শতাধিক প্রভাবশালী নাল দখলকারীর তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।
কিন্তু ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই শহরবাসীকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২১ জুলাই শহরের চাউল বাজারস্থ নালার উপর নুরুল হক কোম্পানী কর্তৃক নির্মিত সেøপ উচ্ছেদের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। এর জন্য সচেতন পৌরবাসি জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদও জানিয়েছেন।
এদিকে ২৫ জুলাই ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক গণ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়-যে সকল ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান পৌরসভার সম্পত্তি ও পয়:নিস্কাশনের নালা ও ছরা দখল করে অবৈধ অবকাঠামো/স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তাদেরকে পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষে নিজ নিজ উদ্যোগে আগামী ৭ আগষ্টের মধ্যে অপসারন করে নিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা অপসারনে ব্যর্থ হলে পৌরসভা আইন ২০০৯ এর ৩৭ ধারামতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে পৌরসভা কর্তৃক তা অপসারন করা হবে এবং এই আইনের অধীন ইমারতের মালিক বা দখলদারদের নিকট হতে অপসারনকৃত ব্যয়িত অর্থ পৌরকর হিসাবে আদায় করা হবে।
সোমবার সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক ড্রেন ও ফুটপাত দখল করে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। বিশেষ করে শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, ঘোনারপাড়া, বৈদ্যঘোনা, গোলদিঘীর পাড়, বাজারঘাটা, বার্মিজ মার্কেট, চাউল বাজার, পেশকার পাড়া, বাহারছড়া, হাসপাতাল সড়কসহ বিভিন্ন স্থানের বড় থেকে শুরু করে ছোট্ট নালা-নর্দমাগুলো ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে রাস্তা আর নালা এখন একাকার। দুটো’ই সমান। কোনটা নালা কিংবা কোনটা রাস্তা তা নির্ধারণ করার কোন উপায় নেই।
শহরের বাজারঘাটার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াছিন অনেকটা ক্ষোভের সাথে বলেন, বছরের পর বছর বর্ষা মৌসুম কিংবা যেকোন সময় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে তাদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়।
একই সুরে কথা বললেন বড় বাজারের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন-নিয়মিত কর প্রদান করার পরও সেরকম কোন নাগরিক সুবিধা পান না তারা। জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য কোন উদ্যোগই গ্রহণ করে না পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর আশার আলো দেখছেন তারা।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী আমাদের রামু ডটকমকে জানান, মাত্র কয়েক জন নালা দখলকারীর কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে পৌরবাসী। তাই এদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজন হলে গনআন্দোলন করা হবে। তাতে কাজ না হলে জনগনকে সাথে নিয়ে চিহ্নিত সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।