অধ্যাপক ডা. আলী হোসেনঃ
দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রীয় রোগে ভুগছেন, এমন ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসে সংক্রমণজনিত জটিলতার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশের শ্বাসতন্ত্রীয় সমস্যা ছিল। ভাইরাসটি শ্বাসক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্ট্রাকচার ও টিস্যুতে আক্রমণ করে। জটিলতার মধ্যে শুধু তীব্র নিউমোনিয়া নয়, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোমও (এআরডিএস) ডেভেলপ হতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সুরক্ষিত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অ্যাজমা রোগীদের সতর্কতা বেশি জরুরি। এআরডিএসে ফুসফুসের টিস্যু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। যেসব ফুসফুসীয় রোগ করোনা জটিলতার উচ্চ ঝুঁকি বহন করে, তা হলো অ্যাজমা ও ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি)। সিওপিডির মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও এল্ফিম্ফসেমা উভয়ই রয়েছে। সিওপিডির প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। তাই যারা বছরের পর বছর ধরে ধূমপান করে আসছেন, তাদেরও করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট জটিলতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আরেকটি ঝুঁকি হচ্ছে অ্যাজমা। ইতোমধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পায়নি এমন অ্যাজমা রোগীদের ফুসফুসের কার্যক্রমও কিছু না কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্বাসতন্ত্রের যেকোনো সংক্রমণে অ্যাজমা রোগীদের ফুসফুসের বায়ু চলাচল নালিতে প্রদাহ হয়ে অ্যাজমা অ্যাটাক হতে পারে। অ্যাজমা রোগীরা কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কারণ তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেবে। তখন আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সাপোর্টের প্রয়োজন হবে। খুব স্পর্শকাতর রোগীদের উন্নত যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ইউনিট সেবা দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বেসরকারি এমনকি সরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউও এমন সুবিধা কম। এসব আইসিইউতে যদি নেগেটিভ প্রেশার ভেন্টিলেটর না থাকে, তাহলে করোনা রোগী যে শ্বাস ত্যাগ করবে তার মাধ্যমে করোনাভাইরাস রুমের বাতাসে ঘুরে বেড়াবে। ফলে ওখানে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা যতই সুরক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে থাকুক, কমবেশি আক্রান্ত হবে। বিশ্বের অন্য দেশে বয়স্ক মানুষ বেশি আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের আক্রান্তে হার বেশি। এর কারণ হলো চীন ও ইতালি থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে বয়স্করা ঘরে অবস্থান করছে। তরুণরা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছে না। বাইরে বেশি বেরোচ্ছে। তাই তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। র্কাও যদি হাইপ্রেশার, ডায়াবেটিস বা অ্যাজমা থাকে, তাহলে করোনা তাদের জন্য ক্ষতিকর বেশি। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তার করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সুতরাং সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে অবস্থান করতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
লেখক, বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ।
সূত্রঃ সমকাল