কক্সবাজারের টেকনাফে আটক সৌদি নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে এক আরএসও নেতাসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিও উপস্থিত ছিলেন বলে বিজিবি জানিয়েছে।খবর বিডিনিউজের।
শনিবার দুপুরে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার একটি বাড়িতে ওই ‘গোপন বৈঠক’ চলাকালে সেখানে অভিযান চালিয়ে সৌদি নাগরিক আবু সালেহ আল আহমেদ গাম্মীসহ চারজনকে আটক করা হয় বলে বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান।
আটক অপর তিনজন হলেন, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরি পাড়ার একটি মাদ্রাসার পরিচালক ছালাউল ইসলাম (৫০), বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার ছৈয়দ করিম ও টাঙ্গাইলের বাশাইল উপজেলার হাবাবিল পাড়ার মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহিম।
এদের মধ্যে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) নেতা ছালাউল ২০১৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার এক পাকিস্তানিসহ পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন। রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনায়ও সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া ছৈয়দ করিম টেকনাফ উপজেলার চেয়ারম্যান জাফর আলমের বেয়াই। ওই বৈঠকে জাফরও ছিলেন বলে বিজিবি কর্মকর্তা জাহিদ জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শামলাপুরে ছৈয়দ করিমের বাড়িতে আরএসওর নেতা ও এক সৌদি নাগরিকের গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ ইকবালের নেতৃত্বে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স করে বেলা ২টার দিকে সেখানে অভিযান চালানো হয়।
“অভিযানকারী দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বৈঠকে সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দিন ও বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিন, আরএসও নেতা হাফেজ ছালাউল ইসলাম ও সৌদি নাগরিক আবু সালেহ আল আহমেদ গাম্মীসহ অনেককে দেখতে পান।”
এরপর সেখান থেকে সৌদি নাগরিকসহ ওই চারজনকে আটক করা হয় জানিয়ে বিজিবি কমান্ডার জাহিদ বলেন, “এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য বদিসহ উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা টাস্কফোর্সের সদস্যদের বাধা দেন এবং টানা-হেঁচড়া করে আটকদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান।”
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আব্দুর রহমান বদির মোবাইলে কয়েক দফা ফোন করে সাড়া না পেয়ে এসএমএস পাঠানো হয়।
পরে রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ওই সময় ইনানিতে ছিলাম। বাহাছড়ার শামলাপুরে বিদেশিসহ কয়েকজন জঙ্গিকে আটকের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। এসে বিজিবি সদস্যদের দেখতে পাই। পরে ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ ইকবালসহ পুলিশ সদস্যরা আসেন।
“ঘটনাস্থলে লোকজন জড়ো হলে আমি ওই চারজনকে সরিয়ে নিতে বিজিবি সদস্যদের অনুরোধ করি।”
আওয়ামী লীগ থেকে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাংসদ বদির নাম ইয়াবা পাচারের হোতা হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাতেও এসেছে। প্রায় ১১ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় তার বিচার চলছে ঢাকার একটি আদালতে।
টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম ও বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিনের নামও ইয়াবা পাচারের জড়িত হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় এসেছে।
আটকদের বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে জানিয়ে জাহিদ বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।