খালেদ শহীদ, রামুঃ
রামু উপজেলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার আশংকাজনক হারে বেড়েছে। রামুতে করোনার নিয়ন্ত্রণে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ফতেখাঁরকুলকে ‘রেডজোন’ ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করতে হবে এখনই। কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ না নেয়া হলে, করোনার সংক্রমণ মহামারিতে রূপ নেবে। এ অভিমত রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া’র। তিনি বলেন, ফতেখাঁরকুলের চৌমুহনী ষ্টেশন ব্যবসা ও প্রশাসনিক যাতায়াতের কেন্দ্রস্থল। শুধু মাত্র চৌমুহনী স্টেশনকে রেডজোনের আওতাভুক্ত করে কার্যকর লকডাউন করা হলে, খুব কম সময়ের মধ্যে রামু করোনা ভাইরাস মুক্ত হবে।
রামু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২০ জুন) পযর্ন্ত রামু উপজেলায় ১৭০ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তৎমধ্যে পুলিশ ও র্যাব সদস্য ৮৮ জন, স্বাস্থ্য বিভাগের ৮ জন এবং জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা সহ স্থানীয় ৮২ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, রামুর গ্রাম অঞ্চলের মানুষ এক কাপ চা খেতে হলেও চৌমুহনীতে আসেন। যত্রতত্র ঘুরে বেড়ান কাজে-অকাজে। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে চলাফেরা করার কারণেই রামু উপজেলায় ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই সংক্রমিত হার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এখনই ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নকে রেডজোন ঘোষনা করে লকডাউন করতে হবে।
জানা গেছে, রামুতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি সদর ইউনিয়ন ফতেখাঁরকুলে। এ ইউনিয়নে স্বপরিবারে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. সরওয়ার উদ্দিন, উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ক্যছাই মং চাক। এ ছাড়াও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব, বাংলাদেশ বেতার সংগীত প্রযোজক বশিরুল ইসলাম, রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুনীল বড়ুয়া সহ ৪২ জন।
উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের মধ্যে জোয়ারিয়ানালায় ৬ জন, চাকমারকুলে ৪ জন, রাজারকুলে ৫ জন, কাউয়ারখোপ, গর্জনিয়া ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে ৩ জন করে, রশিদনগর ও খুনিয়াপালং ইউনিয়নে ২ জন করে এবং কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে ১ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন।
ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, ঈদের সময়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও শপিং মার্কেটে অবাধে চলাফেরা করেছে স্থানীয়রা। ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি এসেছেন অনেকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সিএসজি, টমটমে স্টেশন ছিলো অনিয়ন্ত্রিত। যাতায়াতে যাত্রীরা মানেনি স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব। এ কারণেই রামুর প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনী ষ্টেশনের কাছাকাছি বসবাসরত মানুষ বেশি সংক্রমিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নকে রেডজোন ঘোষনা করে লকডাউন করতে হবে। গাড়ি চলাচল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। রামু উপজেলার প্রবেশদ্বার রশিদনগর ও চাকমারকুল ইউনিয়নে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। তাতেই কার্যকর হবে লকডাউন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মানুষ সচেতন বলেই করোনার নমুনা পরীক্ষা করেছেন। তাই এ ইউনিয়নে সংক্রমিত বেশি দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম, তারা নমুনা পরীক্ষায় কম এগিয়ে এসেছেন। করোনার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন হলে, সচেতনভাবে এগিয়ে আসা উচিত। রামু স্বাস্থ্য বিভাগও একটি নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। অচিরই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে রামুতে করোনা পরিস্থিতি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, ২০ জুন পর্যন্ত রামুতে ৮০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঈদের পরে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নেই প্রায় ৪০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। একটি পরিকল্পনায় অধিক হারে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে বলেই, ফতেখাঁরকুলে অধিক হারে করোনা ভাইরাসের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এ হার আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে কমে আসবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনিক ভাবে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে রামু উপজেলার প্রশাসনিক ও ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চৌমুহনী স্টেশনকে রেডজোন ঘোষনা করে লকডাউন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সোমবার (২২ জুন) বনিক সমিতি, গাড়ি মালিক, পরিবহণ শ্রমিক ও স্বাস্থ্য বিভাগ সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইউএনও রামু বলেন, রেড জোনের ভেতর কোনও রিকশা, ভ্যান, ট্যাক্সি, অটোরিকশা এমনকি প্রাইভেট কারও প্রবেশ করতে পারবে না। মুদির দোকান, ঔষধের দোকান ছাড়া কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। সীমিত সময়ের জন্য মুদির দোকান ও ঔষধের দোকান খোলা রাখা হবে।
রামুতে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নকে লকডাউনের আওতায় আনা হলে, উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে বলে জানিয়েছেন, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া। তিনি বলেন, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নকে রেড জোন করে লকডাউন করা হলে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রামুতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি শূণ্যের কোনটায় নেমে আসবে।
সুশিল সমাজের প্রতিনিধি অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া জানান, ‘রেড জোন’ ঘোষনা করে রামু উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ফতেখাঁরকুলের চৌমুহনী ষ্টেশনে প্রবেশ ও বহির্গমন পথ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাঁটা পথ দূরত্বের মুদির দোকান ও ফার্মেসি ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। অতিব জরুরি না হলে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত হাটবাজারও বন্ধ রাখতে পারলে এ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটবে।
রামু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায়, রামুতে ৮০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়। তার মধ্যে ১৭০ জনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
রামু আইসোলেশন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুন পর্যন্ত রামু আইসোলেশনে ১৬৫ জন করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। তৎমধ্যে ১৮জন উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র চলে যান। সত্তর বছরে বৃদ্ধ ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী সহ রামুতে ১০৪ জন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। বর্তমানে ৪৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন রামু আইসোলেশনে।
ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, রামুবাসির আতংকিত হওয়ার কারণ নেই। জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে, তুলনামূলক রামুতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কম। পরিকল্পিত কার্যক্রমে সকলে নিরলস পরিশ্রমে কাজ করলে, রামুতে অচিরেই শূণ্যের কোটায় নেমে আসবে করোনার সংক্রমিতের হার।
ইউএনও প্রণয় চাকমা বলেন, রেডজোন-লকডাউন পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতেনএলাকার প্রকৃত ম্যাপ ও যথাযথ নির্দেশনা প্রয়োজনে সোমবার সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, কেবল প্রয়োজনীয় অংশটুকুই রেডজোনের আওতাভুক্ত করা হবে।