আমাদের রামু রিপোর্টঃ
মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক রামুর প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবাইদুল হকের অষ্টম মৃত্যু বার্ষিকী আজ।
রামুর কিংবদন্তী নাট্যশিল্পী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ ওবাইদুল হক চেয়ারম্যান ৮১ বছর বয়সে ২০১২ সালের ২২ জুন ইন্তেকাল করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী মোহাম্মদ ওবাইদুল হক ১৯৩২ সালের ১৪ জানুয়ারী রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চরস্থ সিকদার বাড়ীতে জন্ম গ্রহন করেন।
তৎকালীন রামুর শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকান্ডের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হাজ্বী এমদাদ আলী সিকদারের দ্বিতীয় পুত্র মোহাম্মদ ওবাইদুল হক।
তাঁর বড় ভাই আলহাজ্ব ডাক্তার নুরুল হক ছিলেন, কক্সবাজার জেলার প্রথম এমবিবিএস। মোহাম্মদ ওবাইদুল হক কক্সবাজার জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট উকিল মেহের আলী বিএল এর ভাইপো।
রামু উপজেলার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সামাজিক অঙ্গনের অভিভাবক মোহাম্মদ ওবাইদুল হক চেয়ারম্যান কক্সবাজারের রামু-উখিয়ার প্রাচীন জনগোষ্ঠী’র সংগঠন ‘আবদুল আলী সিকদার বংশ সংহতি সংঘ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
তিনি ১৯৪৬ সালে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ালেখার সময়ে অবিভক্ত ভারতবর্ষ রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময়ে জাতীয় সাধারণ নির্বাচনে মুসলিমলীগ প্রার্থী পেকুয়ার কবির আহমদ চৌধুরী’র একজন ক্ষুদে কর্মী হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন তিনি।
১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষার প্রাককালে মুসলিম ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে মৌলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দির গণতান্ত্রিক রাজনীতির সক্রীয় কর্মী হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিক হিসেবে ভূমিকা রাখেন।
ফুটবলে ক্রীড়ানৈপুণ্যে প্রশংসিত যুবক মোহাম্মদ ওবাইদুল হক ওই সময়ে, ফুটবল খেলার মাঠে দর্শকমাতানো খেলোয়াড় হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন। একই সময়ে জড়িয়ে পড়েন, মঞ্চ নাটকে। নবাব সিরাজউদ্দোল্লাহ নাটকে গোলাম হোসেন চরিত্রাভিনয়ের জন্য এখনও কক্সবাজার জেলায় কিংবদন্তী হয়ে আছেন তিনি।
রাজনীতি, ফুটবল ও অভিনয়ে জড়িয়ে পড়লেও তিনি গৌরবের সাথে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ভর্তি হন সাতকানিয়া কলেজে। খেলা আর অভিনয়ে ওই সময় তিনি তৎকালীন রামুর পাশাপাশি সাতকানিয়ায় অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
তিনি ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের করাচী ডেপলাপমেন্ট অথরিটিতে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে নিজ জন্মস্থান রামুতে ফিরে এসে ব্যবসা-বানিজ্যের পাশাপাশি রাজনীতি, মঞ্চনাটক ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন ।
স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে সু-সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করে থাকেন। আত্মগোপনে থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় রাজনীতিকের ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ১৯৭১ সালে মোহাম্মদ ওবাইদুল হক রামু আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে সক্রিয় গুরু-দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মোহাম্মদ ওবাইদুল হক রামু থানা এ্যাডমিনস্টেটিভ কাউন্সিলরের আহবায়ক মনোনীত হন।
মোহাম্মদ ওবাইদুল হক ১৯৭২ সালে রামু থানার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের (সদর) পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান মনোনীত হন এবং ১৯৭৩ সালে একই ইউনিয়নের জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সফলতার সাথে এলাকার ন্যায় পরায়ন বিচারক হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রামু উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
রামু উপজেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ রামু সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ ওবাইদুল হক, রামু উপজেলার শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রামু প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খালেদ শহীদ তার পিতা মরহুম মোহাম্মদ ওবাইদুল হক চেয়ারম্যানের আত্মার মাগফেরাতে আত্মীয়-পরিজন সহ সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছন।