খালেদ শহীদ, রামুঃ
রামুতে অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব থেকে রক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রায় ৫৯ হাজার শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু হয়েছে। ৬ মাস থেকে ১ বছরের কম বয়সের ৮ হাজার ২০০ জন শিশুকে একটি করে নীল রঙের এবং ১ বছর থেকে ৫ বছর বয়সের ৫০ হাজার ৫০০ জন শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে।
রোববার (৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টায় রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন কর্মসূচী উদ্বোধন করেন, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা। এ সময় রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া, রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিশুর মা-বাবাকে সচেতন ভাবে শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো নিশ্চিত করতে এবং মুখে মাক্স পরিধান করে, শিশুকে নিকটস্থ কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর অনুরোধ জানান অতিথিরা।
রামু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি স্থায়ী কেন্দ্র সহ উপজেলার এগার ইউনিয়নের ২৬৫ টি কেন্দ্রে ৬৩ জন প্রতিবন্ধী শিশু সহ প্রায় ৫৯ হাজার শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। রোববার (৪ অক্টোবর) থেকে সাতটি ইউনিয়নে ও সোমবার (৫ অক্টোবর) থেকে চারটি ইউনিয়নে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত রামু স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উদযাপন করা হবে।
রোববার ৪ অক্টোবর থেকে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে ১৩ জন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৫ হাজার ৫২৬ জন শিশুকে, রশিদনগর ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে দুইজন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৩ হাজার ৮৩১ জন শিশুকে, খুনিয়াপালং ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে পাঁচজন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৭ হাজার ৭৩৮ জন শিশুকে, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে ১৪ জন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৬ হাজার ২৩০ জন শিশুকে, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে আটজন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৫ হাজার ৯৬২ জন শিশুকে, গর্জনিয়া ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে পাঁচজন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৪ হাজার ৩৮৫ জন শিশুকে, ঈদগড় ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে চারজন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৪ হাজার ৭৭৬ জন শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
৫ অক্টোবর থেকে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে ৫ হাজার ৭৪৯ জন শিশুকে, রাজারকুল ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে দুইজন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৪ হাজার ৫১৪ জন শিশুকে, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে সাতজন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৬ হাজার ২৫০ জন শিশুকে, চাকমারকুল ইউনিয়নের ২৪ টি কেন্দ্রে তিন প্রতিবন্ধী শিশু সহ ৩ হাজার ৬২১ জন শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, রামু উপজেলার প্রত্যেক মা-বাবাকে সচেতনভাবে নির্ধারিত বয়সের প্রতিটি শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। ভিটামিন ‘এ’ শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব থেকে শিশুদের রক্ষা করে তাই নয়, ভিটামিন ‘এ’ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ও জটিলতা কমায় এবং শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। রাতকানা, দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়ার, হাম ও মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
তিনি বলেন, ৬ মাস থেকে ১ বছরের কম বয়সের ৮ হাজার ২০০ জন শিশুকে একটি করে নীল রঙের এবং ১ বছর থেকে ৫ বছর বয়সের ৫০ হাজার ৫০০ জন শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। রামু স্বাস্থ্য বিভাগ পরিকল্পিত ছকে কাজ করছে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে। কোন শিশুকেই এই ক্যাম্পেইনের বাইরে রাখা যাবে না। তিনি আরও বলেন, রোববার প্রথম দিনেই রামু উপজেলার সাত ইউনিয়নে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই সাত ইউনিয়নের প্রতিনি ইপিআই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে, জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনে তদারকি করেছি। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচী। প্রত্যেক দিনেই গ্রামের ইপিআই কেন্দ্রে গিয়ে জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন কর্মসূচী তদারকি করা হবে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, আমাদের প্রজন্ম শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের ভবিষ্যৎকে সুস্থধারায় নিতে হলে, প্রত্যক শিশুকে সুস্থ থাকা অপরিহার্য্য। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শিশুর দেহে স্বাভাবিকতা বৃদ্ধি করে। রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমাদের প্রজন্মকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রদানে, আমাদের প্রত্যককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, পুরোহিত, শিক্ষক, সাংবাদিকদেরও দ্বায়িত্ববান হয়ে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফল আয়োজনে কাজ করতে হবে। এটি শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা কর্মসূচী নয়। নিজ সন্তানকে সুস্থতা রাখার জন্য মা-বাবাকে দায়িত্ববান ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচী বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য বিভাগকে সহযোগিতা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষার মাধ্যমে শিশুদের নিয়ে মা-বাবাকে ইপিআই কেন্দ্রে এসে শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে অনুরোধ জানান তিনি।