ইমরান হোসাইন, পেকুয়া:
মৌসুমী বর্ষণে পেকুয়ায় পাহাড় ধ্বসের আশংকা করছে স্থানীয় লোকজন। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় যত্রতত্র ভাবে কেটে পাহাড়ের ঢালু ও পাদদেশে বসবাস করছে কয়েক সহস্রাধিক মানুষ। পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন চলতে থাকলে আগামীতে আরো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা করা হচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলা পাহাড় বেষ্টিত তিন ইউনিয়নে সম্পুর্ন ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় চুঁড়ায় বসবাস করে আসছে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। এর মাত্রা সম্প্রতি আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পাহাড় ধ্বংসসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব পরিবারগুলোর জন্য অশনি সংকেত দেখা দিতে পারে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের মালিকানাধীন বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতায় উপজেলার হাজার হাজার একর বনভুমি ইতিমধ্যে বেহাত হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এসব বনভূমিতে অনুপ্রবেশকারীরা রাতারাতি অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলেছেন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সর্বোচ্চ চুঁড়ায় চরম ঝুঁকি নিয়ে অন্তত দু’হাজারের অধিক মানুষ বর্তমানে বসবাস করছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিন ও কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীনে পেকুয়া উপজেলার টইটং, বারবাকিয়া ও শিলখালী ইউনিয়নে প্রায় ১৮হাজার হেক্টরেরও বেশি সরকারি বনভূমি রয়েছে। এসব বনভূমি এখন ভুমিদস্যুদের দখলে। এক শ্রেনির পাহাড়খেকোরা সরকারি আইন অমান্য করে পানির দামে বিক্রি করে দিচ্ছে এসব বনভূমি।
অপরদিকে এসব পাহাড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যে সমস্ত উপকারভোগী হিসেবে সরকারের কাছ থেকে অংশীদারিত্ব দলিল পেয়েছেন তারা গাছ অপরিপক্কবস্থায় উজাড় করে মানুষের বসতির জন্য বিক্রি করে দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, শিলখালী, বারবাকিয়া ও টইটং বনাঞ্চলের ভিতরে স্থানীয়দের পাশাপাশি কিছু রোহিঙ্গা পরিবারও বসতি স্থাপন করে চলেছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার (বার্মা) থেকে অবৈধপথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে সংরক্ষিত বনভূমিতে বসতি গড়ে তুলছেন তারা। এতে, তাদের সহযোগিতা করছে কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। অন্যদিকে বনবিভাগের অসাধু কিছু কর্মচারী অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গা জানলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
সরোজমিনে দেখা যায়, টইটং ইউনিয়নের সংগ্রামের জুম, বটতলীর গহীন অরণ্য মধুখালী, হারখিলারঝিরা, আধার মানিক, পুর্ব ধনিয়া কাটা, বারবাকিয়া ইউনিয়নের আবাদি ঘোনা, পুর্ব পাহাড়িয়া খালী, চাকমার ডুরি, পুর্ব ভারুয়াখালী, ছনখোলার জুম ও শিলখালী ইউনিয়নের জারুরবুনিয়া, সাপের গাড়া, মাদাবুনিয়া, মাঝের ঘোনা, চিতার ঝিরি, নাপিতার ঘোনা, সবুজ পাড়া, ঢালার মুখ, পুর্ব শিলখালীতে পাহাড়ের মানুষের অবৈধ বসতি।
গত কয়েক বছরের ব্যবধানে কক্সবাজারের উপকুলবর্তী মহেশখালী ও কুতুবদ্বিয়া উপজেলা থেকে শতশত লোকজন পেকুয়ার বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় বসবাসের জন্য ছুটে এসেছেন। এছাড়া, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের সমুদ্রের করাল গ্রাসে ভাঙ্গন কবলিত নিম্নাঞ্চলের মানুষগুলো অনায়সে বসবাসের জন্য পাহাড়ের দিকে ছুটছে। এ সুবাধে পাহাড়ের বসতি সবচেয়ে বেড়েছে। এসব বসতির ফলে পাহাড়ের জমির শ্রেনি পরিবর্তন হচ্ছে। তবে ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বর্ষা মৌসুমে একাধিক পাহাড় ধ্বসে পেকুয়ায় বেশ কিছু প্রানহানি ঘটেছে।
অধিক ঝুঁকিতে এসব পরিবার বসবাস করলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছেনা কোন ধরনের পদক্ষেপ। পেকুয়ার সচেতন পরিবেশপ্রেমী মানুষ মনে করেছেন, দ্রুত সময়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে না নিলে দুর্ঘটনা নিশ্চিত।
বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল রামুনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বনবিভাগ ইতিপুর্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে অনেক অনুপ্রবেশকারীকে পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করেছে। ভবিষ্যত এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে। কাউকে পাহাড়ে থাকতে দেওয়া হবেনা।
পেকুয়ার ইউএনও মারুফুর রশীদ খান রামুনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে খুব শীঘ্রই সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।