অনলাইন ডেস্কঃ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু। মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী। আগামী মার্চ বা এপ্রিলে এটা শুরু হতে পারে।
বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত রোহিঙ্গাদের জন্য চীন সরকারের জরুরি চাল সহায়তাবিষয়ক এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন এবং চীন সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং স্বাক্ষর করেন। চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গাদের জন্য চীন সরকার ২ হাজার ৫৫৪ টন চাল দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে এ চাল পেয়েছে বাংলাদেশ। চাল এখন রোহিঙ্গাদের বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘মানবিক কারণে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করানো যায়, ততই সবার জন্য মঙ্গল।’
চলমান আলোচনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মঙ্গলবার বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে পজিটিভ আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার বুঝতে পেরেছে যে, তাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া দরকার। বাংলাদেশও আশা করে, তারা (রোহিঙ্গা) সম্মানের সঙ্গে নাগরিক অধিকার নিয়ে ফিরে যাক। চীন সরকারও চায় বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে তাদের ফিরে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা থেকে ৪১ হাজার ৭১৯ জন রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করেছে মিয়ানমার। এই তালিকা ধরে আগামী মার্চ-এপ্রিলে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের গ্রামভিত্তিক পুনর্বাসন হোক। কিন্তু মিয়ানমার সরকার চায় বাংলাদেশ সরকার যে তালিকা দিয়েছে এবং যে তালিকাটা তারা শনাক্ত করেছে, সেই তালিকা অনুযায়ী ফেরত নিতে। এ জায়গায় মঙ্গলবারের বৈঠক শেষ হয়েছে। আশা করি, পরবর্তী বৈঠকে আরও সমাধান আসবে। আমরা বৈঠকে চীন ও মিয়ানমারের যে সদিচ্ছা দেখেছি, তিনটি পক্ষই আশা করছে, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হবে।’
ডা. এনামুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য ও মঙ্গলবারের বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তাদের শতভাগ ইচ্ছা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সে সম্পর্ক তারা বজায় রাখবেন। বাংলাদেশের সব সমস্যা সমাধানে তারা আমাদের পাশে থাকবেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে তারা কাজ করে যাবেন।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৮ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সেখান থেকে তারা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। মিয়ানমার সরকার ৪১ হাজার ৭১৯ জনকে ভেরিফায়েড করেছে। তাদের নেওয়ার কথা তারা জানিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- শরণার্থী প্রত্যাবর্তন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন।
সূত্রঃ সমকাল