হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
জঙ্গি হামলা, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তুরষ্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থান, ক্রিকেট-ফুটবল খেলাসহ দেশ-বিদেশের নানা খবরাখবর শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে ক্লাসরুমে বসে। পুস্তকের পাঠ্যসূচির ক্লাসে বসে কম্পিউটার থেকে ধারণা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একগাদা বই স্কুল ব্যাগে করে আনতে হচ্ছে না। এই চিত্র মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের দুর্গম নাইক্ষ্যংছড়ি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের। আর এসব সুবিধা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে।
সম্প্রতি সরেজমিন গেলে বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ম্যাত্রছিং চাক বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রাক্টিক্যাল ক্লাসেই পাঠ্যসূচি বুঝে নিচ্ছে। বিদেশের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের এক নম্বর শিক্ষার্থী দেলোয়ারা বেগম বলেন, বই-খাতা আনার প্রয়োজন হয় না। খেলার খবর জানতে টেলিভিশনের নিউজের জন্য অপেক্ষা করতেও হয় না। ল্যাপটপ অন করলেই খেলার প্রতি মুহূর্তের খবর পাওয়া যায়। তাছাড়া দেশ-বিদেশের সংবাদ জানতে সংবাদপত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। সংবাদপত্র হকারের জন্যও অপেক্ষা করার প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রতিদিনকার খবরাখবর ক্লাসরুমে বসে পাওয়া যাচ্ছে।
একই শ্রেণির এনুচিং চাক আঁখি বলেন, আমরা শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের পর থেকে নানা বিষয় শিখতে পারছি। এই ল্যাবে বসে ই-বুকে বই পড়তে পারি এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে পড়ালেখার মান উন্নতি করতে পারছি।
বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক ওবাইদুল হক আমাদের রামু কে বলেন, এখন থেকে শিক্ষার্থীদের একগাদা বই বহন করতে হবে না। শিশু শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পাবে। ছাপা পাঠ্যপুস্তক না পেলেও অসুবিধা হবে না। ইন্টারনেট থেকে সকল পাঠ্যসূচি শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পাবে। এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আরো একধাপ এগিয়ে গেল।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাসরিন সুলতানা বলেন- শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ল্যাব থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। এ ল্যাবে প্রায় অর্ধশতাধিক ল্যাপটপের পাশাপাশি স্কেনার ও প্রজেক্টর রয়েছে। যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটের খবর দেশ-বিদেশের সুখ-দুঃখের খবর সহজেই জানতে পারছে ছাত্রীরা। মোট কথা গোটা পৃথিবীর খবরাখবর এখন শিক্ষার্থীদের হাতের মুঠোর মধ্যে।
তিনি জানান-১৯৯২ সালে উপজেলার এক মাত্র এ নারী প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫২৬ জন ছাত্রী অধ্যায়ন করছে। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে অন্তত ১৫ জন।
নাইক্ষ্যংছড়ি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক শফিউল্লাহ বলেন, দুর্গম এ উপজেলায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন নবদিগন্তের সূচনা করেছে। সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রীরাও তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া পাচ্ছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও জেলার শ্রেষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম শাহেদুল ইসলামের একান্ত চেষ্ঠার ফলে তা সম্ভব হয়েছে ।