সুনীল বড়ুয়া:
কক্সবাজারের রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করণের কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী। প্রথম কার্যাদেশ অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সাড়ে আট বছর। সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় এরমধ্যে ঠিকাদারও পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু এ প্রকল্পের শনির দশা কিছুতেই কাটছেনা। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এবং ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঠিকাদারের গাফেলতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি।
রামু হাসপাতাল এবং কক্সবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের অধীনে চিকিৎসক, সেবিকা এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য দু’টি দো’তলা ও একটি তিনতলা বাসভবন নির্মাণ, একটি জরুরী ও বর্হিবিভাগ ভবন, একটি পুরনো একতলা ভবনের উপরে বর্ধিত ভবন নির্মাণ এবং পুরনো ভবন সংস্কার কাজ করার জন্য ব্যয় ধরা হয় তিন কোটি ২৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫শ ৪৯ টাকা।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে এ কাজ পায় ঢাকার ‘আলম ব্রাদার্স’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে এ কাজ বাস্তবায়ন শুরু করেন হারুন অর রশীদ নামের একজন ঠিকাদার। তিনি ঢাকার সিটি কর্পোরেশনের লালবাগ এলাকার তৎকালীন কাউন্সিলর। ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী ওই ঠিকাদারকে সাইট পজিশন বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালে রি-টেন্ডারের মাধ্যমে এ কাজ দেওয়া হয় হিরো বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। এ সময় ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০১৫ নভেম্বরে কাজ শেষ করা কথা। কিন্তু কাজের সময় সীমা পেরিয়ে গেলেও এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করেছে মাত্র ৩০-৩৫ ভাগ।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন চৌধুরী আমাদের রামু কে জানান, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এ হাসপাতালের মুল ভবনটির অনেক আগে থেকেই জ্বরাজীর্ণ অবস্থা। নীচতলায় জরুরী বিভাগ, বর্হিবিভাগের চিকিৎসকদের কক্ষ, দোতলায় পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডসহ ভবনের বিভিন্ন স্থানে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। এমনকি ছাদ দুর্বল হওয়ায় সেবিকাদের কক্ষে সিলিং ফ্যান ছিড়ে পড়ে এক সেবিকা আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবা তো ব্যাহত হচ্ছেই।
তিনি বলেন, শুরুর দিকে ঠিকাদারের গাফেলতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। এ বিষয়টি তিনি একাধিকবার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এইচ.ই.ডি) লিখিত অভিযোগ দেন বলে ও জানান।
বর্তমান রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মো. আব্দুল মান্নান আমাদের রামু কে জানান, ৫০ শয্যায় উন্নীত হলে হাসতাপালে ঔষধপত্র সরবরাহের পরিমাণ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদের সংখ্যা বাড়বে। এতে রোগীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি বাড়তো সেবার মানও। বর্তমানে ৩১ শয্যার হলেও এ হাসপাতালে ইনডোরে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। কিন্তু কোনোরকমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া গেলেও বাড়তি রোগীদের খাবার সরবরাহ করা যায়না। এতে সেবিকা ও স্টাফদের সাথে রোগীর সঙ্গীদের প্রতিনিয়ত বাক বিতন্ডা হচ্ছে। তিনি বলেন,আমরা বার বার তাগাদা দিচ্ছি,কাজ শেষ করার জন্য। কারণ হাসপাতালটি ৫১ শয্যায় উন্নীত হলে এলাকার মানুষের সুযোগ সুবিধা বাড়বে।
এ প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা কক্সবাজার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.মোর্শেদুল আলম ঠিকাদারের গাফেলতির কথা স্বীকার করে আমাদের রামু কে বলেন, তাদের (ঠিকাদারের) গাফেলতির কারণেই দফায় দফায় ঠিকাদার পরিবর্তন করেও এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। তিনি বলেন, গত জানুয়ারী মাসে প্রধান প্রকৌশলী মহোদয় এ কাজ পরিদর্শন করেন। সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় তিনি ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করার নিদের্শন দেন। এ কারণে সর্বশেষ গত মে মাসে এ কার্যাদেশও বাতিল করা হয়েছে । বর্তমানে এটি আবার নতুন করে টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে।