ক্রীড়া ডেস্কঃ
ব্যাটিং ব্যর্থতায় পুঁজি কেবল ১০৪ রানের। এর মধ্যেও সাকিব আল হাসান রান বিলিয়ে গেলেন অকাতরে। তবুও সহজে হার মানেনি বাংলাদেশ। লড়াই করে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেছে মাহমুদউল্লাহর দল।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ৩ উইকেটে জিতেছে সফরকারীরা। ১০৫ রানের লক্ষ্য ৬ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
এই জয়ে কমল ব্যবধান, পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এখন ৩-১ এ এগিয়ে বাংলাদেশ।
প্রমোশন পেয়ে তিনে নেমে ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান খেলতে পারলেন কেবল ১৫ বল। কিন্তু ম্যাচে ছোট্ট এই ইনিংসের প্রভাব পড়ল বড়। পাঁচ ছক্কা ও এক চারে যে তিনি করে ফেলেন ৩৯। তার পাঁচ ছক্কাই এসেছে সাকিবের এক ওভারে!
বাঁহাতি স্পিনারের ৪ ওভার থেকে ৫০ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। প্রায় অর্ধেক রান একজন বোলারই দিয়ে ফেলার পর লড়াই করা খুব কঠিন। বাকিদের মিলিত চেষ্টায় সেই কাজটা করল বাংলাদেশ। কিন্তু যথেষ্ট হলো না। দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে টানা সাত জয়ের পর পেল হারের তেতো স্বাদ।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সৌম্য সরকারকে হারায় বাংলাদেশ। এক ছক্কায় বাঁহাতি এই ওপেনার করেন কেবল ৮ রান।
শূন্যতেই ফিরতে পারতেন সাকিব। কিন্তু ম্যাথু ওয়েড রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে যান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে বেশি কিছু করতে পারেননি তিনি। টাইমিং পেতে সংগ্রাম করেছেন পুরোটা সময়। শেষে তেড়েফুড়ে জশ হেইজেলউডকে মারতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে শেষ হয় তার ভোগান্তি।
আগের ম্যাচে লড়াকু ফিফটিতে দলকে টানা মাহমুদউল্লাহ এবার খুলতে পারেননি রানের খাতা। অ্যাডাম জ্যাম্পার জায়গায় খেলা মিচেল সোয়েপসনের চমৎকার এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরের বলে একই পরিণত হয় নুরুল হাসান সোহানের।
অনেকটা সময় টিকে থাকলেও রানের গতিতে দম দিতে পারেননি মোহাম্মদ নাঈম শেখ। সংগ্রাম করেছেন রানের চাকা সচল রাখতে। সোয়েপসনকে গায়ের জোরে মারার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে থামেন তরুণ এই ওপেনার। ৩৬ বলে দুই চারে তিনি করেন ২৮।
রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন আফিফ হোসেন। অ্যাশটন অ্যাগারকে স্লগ করে ছক্কার চেষ্টায় শেষ হয় বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ইনিংস। দ্রুত ফিরেন শামীম হোসেন।
শেষ দিকে একটি করে ছক্কা ও চারে বাংলাদেশের সংগ্রহ একশ পার করেন মেহেদি হাসান।
সেভাবে কখনও গতি পায়নি স্বাগতিকদের ইনিংস। পুরোটা সময়ই লড়াই করতে হয়েছে রানের জন্য। সোয়েপসন ভুগিয়েছেন দারুণ। ১২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া এই লেগ স্পিনার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
রান তাড়ায় শুরুতেই ওয়েডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপরই ক্রিজে নেমে বাংলাদেশকে এলোমেলো করে দেন ক্রিস্টিয়ান। চতুর্থ ওভারে সাকিবকে পাঁচ ছক্কা মেরে নেন ৩০ রান। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এর চেয়ে খরুচে ওভার আছে কেবল একটি।
ক্রিস্টিয়ান ঝড় থামান মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগেই বেন ম্যাকডারমটকে এলবিডব্লিউ করে দেন নাসুম আহমেদ। মোইজেস হেনরিকেস, অ্যালেক্স কেয়ারির দ্রুত বিদায়ের পর মিচেল মার্শকে বোল্ড করে দেন মেহেদি।
১৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ। কিন্তু অ্যাশটন অ্যাগার ও টার্নারের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ধাক্কা সামাল এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিকে ২৭ বলে ২৭ রান করা অ্যাগারকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু সিরিজে প্রথম জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার।
এই ম্যাচেও বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ দেন কেবল ৯ রান। সঙ্গে নেন দুটি উইকেট। আঁটসাঁট বোলিং করেন মেহেদি ও নাসুম। কিন্তু পুঁজি যে ছিল বড্ড কম।
আগামী সোমবার জয়ে ফিরতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০৪/৯ (নাঈম ২৮, সৌম্য ৮, সাকিব ১৫, মাহমুদউল্লাহ ০, সোহান ০, আফিফ ২১, শামীম ৩, মেহেদি ২৩, নাসুম ২*, শরিফুল ০; টার্নার ৪-০-২২-০, হেইজেলউড ৪-০-২৪-২, অ্যাগার ৪-০-২৩-০, টাই ৩-০-১৮-৩, সোয়েপসন , হেনরিকেস ১-০-৫-০)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৯ ওভারে ১০৫/৭ (ম্যাকডারমট ৫, ওয়েড ২, ক্রিস্টিয়ান ৩৯, মার্শ ৫১, হেনরিকেস ৪, কেয়ারি ১, টার্নার ৯*, অ্যাগার ২৭, টাই ৪*; মেহেদি ৪-০-১৭-২, সাকিব ৪-০-৫০-০, নাসুম ৪-০-১৭-১, মুস্তাফিজ ৪-১-৯-২, শরিফুল ২-০-৮-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৩-০)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ
ম্যান অব দা ম্যাচ: মিচেল সোয়েপসন
সূত্রঃ জাগোনিউজ