সোয়েব সাঈদ:
টিনের ছাউনী আর বেড়া দিয়ে তৈরী লম্বা বিদ্যালয় কক্ষ। সেই ঘরে মাটিতে বসেই পাঠ নিচ্ছিলো শিশু শিক্ষার্থীরা। আর দূর থেকেই শোনা যাচ্ছিলো শিশুদের পাঠ নেয়ার শব্দমালা।
নির্জন পাহাড়ি অরণ্য ঘেরা জনপদে গড়ে তোলা এ বিদ্যালয় যেন মুখরিত করে তুলেছে পুরো এলাকাকে। আলোকিত করছে শিক্ষা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের দূর্গম পাহাড়ি এলাকা পশ্চিম গনিয়াকাটায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিম গনিয়াকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চোখে পড়ে পাঠদানের মুখরিত এ দৃশ্য।
গ্রামবাসীর উদ্যোগে অবহেলিত জনপদের শিশুদের আলো ছড়ানোর এ উদ্যোগটি আশপাশের গ্রামের জনসাধারণের মাঝেও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এভাবে পাঠদান করে আসছেন স্থানীয় ৩ শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিল জানিয়েছেন, রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম গনিয়াকাটা, নাপিতেরঘোনা, মাঝের বাসা, চৌধুরী খামার, উত্তরপাড়া সহ আশপাশের আরো কয়েকটি অতিদূর্গম গ্রামে কোন সরকারি বা বেসরকারি বিদ্যালয় ছিলো না। ফলে এলাকার শত শত শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে পশ্চিম গনিয়াকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন স্থানীয় উদ্যোমী কিছু ব্যক্তি।
তিনি আরো জানান, এলাকাবাসীর এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বিদ্যালয়ের জন্য ৪০ শতক জমি দান করার ঘোষনা দেন, স্থানীয় সমাজসেবক আলহাজ্ব ছিদ্দিক আহমদ। এরফলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয় সম্প্রতি আলোর মুখ দেখে। আলহাজ্ব ছিদ্দিক আহমদের দেয়া ওই জমিতে চলতি বছরের শুরুতে নির্মাণ করা হয়েছে টিনের বেড়া আর ছাউনী দেয়া বিদ্যালয় কক্ষ। আবার অনেক জনপ্রতিনিধি আর স্থানীয় উদ্যোমী ব্যক্তি বিদ্যালয়ের জন্য বেঞ্চ আর প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। যার প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, পশ্চিম গনিয়াকাটা এলাকার ব্যবসায়ি আলী আহমদ, মোহাম্মদ হোছন, শামসুল আলম সহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি এ এলাকার শিশুদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। পরে এলাকার জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তুরের জনতাকে নিয়ে কয়েকদফা বৈঠক করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করেন।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা আলী আহমদ আমাদের রামু কে জানিয়েছেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তিনজন শিক্ষক দক্ষতার সাথে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন। এরা হলেন, প্রধান শিক্ষক মো. ইব্রাহিম খলিল, সহকারী শিক্ষক তছলিমা আকতার ও রাজিয়া আকতার। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় আড়াই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
জানা গেছে, এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় এলাকার অনেকের ভূমিকা অগ্রগন্য। এদের মধ্যে রয়েছেন, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম, বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ, সাইমুম সরওয়ার কমল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান, সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান, ব্যবসায়ি আবুল কাসেম, সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ, ব্যবসায়ি আলী আহমদ, মোহাম্মদ হোছন, শামসুল আলম, ইউসুফ আলী, ডা. ইলিয়াছ, নুরুল ইসলাম সহ অনেকে।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় কোন স্কুল নেই। যে কারণে তাদের পড়ালেখাও হতো না। এখন এ স্কুলে তারা সহজে ও আনন্দের সাথে পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ জানিয়েছেন, এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কারণে এখন আশপাশের অন্ধকার গ্রামগুলো আলোকিত হচ্ছে। এলাকার সব মানুষের সহযোগিতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন বিদ্যালয়ে সুন্দর এবং মানসম্মতভাবে পাঠদান হচ্ছে। শিক্ষকরাও দক্ষ এবং আন্তরিক। এ বিদ্যালয়কে আরো এগিয়ে নিতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, খুবই দূর্গম ও অজপাড়া গায়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ওই এলাকাকার ২/৩ কিলোমটিারের মধ্যে কোন বিদ্যালয় নেই। তাই এ উদ্যোগ সময়োপযোগী। তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এখন ইউনিয়ন পরিষদ এবং ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বেঞ্চ দেয়ার উদ্যোগ নেবেন।